ক্ষুদে চ্যাম্পিয়নস,
দেখতে দেখতে ২০১৮ বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব চলে এলো। তোমরা নিশ্চয়ই নিয়ম করে টিভির সামনে বসে পড়ছ প্রতিটি ম্যাচ দেখতে? আচ্ছা, এই যে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে, তোমরা কি জানো এর শুরু কবে এবং কোথায়?
তবে শোনো, আজ থেকে প্রায় ৮৮ বছর আগে লাতিন আমেরিকা, মানে আজকের দঃ আমেরিকার পূর্বপ্রান্তে উরুগুয়ের মন্তেভিদিও নামে একটি সমুদ্রতীরবর্তী শহরে ১৯৩০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ তার যাত্রা শুরু করে। মজার কথা কি জানো, প্রথমবারের বিশ্বকাপে কোনও কোয়ালিফাইং পর্বই ছিল না! ফিফা তার সদস্য দেশগুলিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানায় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু ফিফার এই ডাকে সাড়া দেয় গোটা বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশ!
এর পেছনে অবশ্য বড়সড় একটি কারণ ছিল,
ইউরোপ থেকে জাহাজে করে মন্তেভিদিও যেতে সে যুগে সময় লাগত প্রায় দু'সপ্তাহ! যা আজকের সময়ে মাত্র ১৮-১৯ ঘন্টায় অনায়াসে পার করা যায়! শুধু একটু বিমানে চাপলেই হলো। তা সেইসময়ে টানা চোদ্দো-পনেরো দিনের সমুদ্রযাত্রা করে অনেক ইউরোপিয়ান দেশই রাজি হলো না বিশ্বকাপে যোগ দিতে।
শেষ পর্যন্ত মাত্র চারটি দেশ: বেলজিয়াম, রোমানিয়া, ফ্রান্স আর অবিভক্ত যুগোস্লাভিয়া রাজি হল সমুদ্রশহর মন্তেভিদিও পাড়ি দিতে। এস. এস. কন্তে ভার্দে নামের জাহাজে প্রথম পা রাখে রোমানিয়ার দলটি, এরপর ফ্রান্সের দলটিও এই জাহাজেই চড়ে। উঠলেন তিনজন রেফারি। শুধু তাই নয়, এস এস কন্তে ভার্দেতে উঠলেন ফিফার প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে স্বয়ং! সঙ্গে গেল বিশ্বের প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের সোনায় মোড়া ট্রফিটি!
তোমরা যারা একটু বড়, নিয়মিত ক্লাব ফুটবল দেখো..... বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ বা ম্যান ইউয়ের ফ্যান বা হয়তো এক দুটো বিশ্বকাপ- ইউরো কাপ দেখে ফেলেছ তারা নিশ্চয়ই জানো একটা ফুটবল দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি হলেন সেই দলের ম্যানেজার বা কোচ। তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সুচারু স্ট্র্যাটেজির ওপরই অনেকটা নির্ভর করে দলের সাফল্য বা ব্যর্থতা। আর তাই গোটা বিশ্ব জুড়ে দেশে দেশে ক্লাবে ক্লাবে বিখ্যাত কোচেদের আকাশছোঁয়া চাহিদা।
ক্লাব ফুটবলই হোক বা জাতীয় স্তরের খেলা কিংবা বিশ্বকাপ, দেখা গেছে ফুটবল টিমে বরাবরই বিদেশী কোচের যেমনি রমরমা তেমনি জনপ্রিয়তা। কিন্তু, একটি অবাক করা বিষয় কি জানো, এ পর্যন্ত হওয়া বিগত ২০টি বিশ্বকাপের প্রতিটি চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ ছিলেন সেদেশেরই, আশ্চর্য!
তবে কি জাতীয় দলের কোচ ভিনদেশী হলে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব? দেখা যাক, এবারের বিশ্বকাপ এই আশ্চর্য ব্যাপারের ব্যতিক্রমী কোনও নজির গড়তে পারে কি না!
বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটি যেমন শেষে গিয়ে ট্রফি জিতেছে বেশ কয়েকবার, তেমনই দেখা গেছে আয়োজক দেশ মূলপর্বের কয়েকটি ধাপ পার করতেও পেরেছে অনায়াসেই।
২০১০ বিশ্বকাপ, দক্ষিণ আফ্রিকা দল |
কিন্তু আয়োজক দেশ হয়েও গ্রুপ পর্বের বাধা পার করতে পারেনি এমন হয়েছে মাত্র একবার! আট বছর আগে ২০১০ এর বিশ্বকাপে দঃ আফ্রিকা। ভাবো তো, এতবড় কর্মকান্ডের যে আয়োজক সেই দেশ কিনা টুর্নামেন্ট ক'দিন গড়াতে না গড়াতেই গোটা বিষয়টি স্রেফ দর্শক হয়ে দেখে গেছে শেষপর্যন্ত!
তেমনই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন টিম বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই ছিটকে গেছে, এবারের টুর্নামেন্ট নিয়ে এমনটা হলো পাঁচ পাঁচবার!
১৯৯৮-এর বিশ্বকাপজয়ী জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স ২০০২তে, ২০০৬-এর বিশ্বকাপজয়ী দেশ ইতালি ২০১০-এ, আর সেবারের চ্যাম্পিয়ন দল স্পেনও ২০১৪-এ গ্রুপপর্বের বেড়া ডিঙোতে অক্ষম হয়। এদের আগে ১৯৬২ সালের বিশ্বজয়ী ব্রাজিল গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি ১৯৬৬-র বিশ্বকাপে। এই তালিকায় ঢুকে পড়ল জার্মানির নামও। ২০১৪-র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল ম্যাচ খেলা জার্মানি এবারে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে।
পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স এবং স্পেনই হলো এমন দেশ যারা এখনো অব্দি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অর্থাৎ ইউরো কাপ জেতার ঠিক আগে বা পরেই বিশ্বকাপও জিতেছে! স্পেন ২০১০ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে আর পরে ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো কাপ জেতে, আবার পশ্চিম জার্মানি ১৯৭৪-এ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঠিক আগে ১৯৭২ সালে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ঠিক তেমনই, ফ্রান্স ১৯৯৮-এ বিশ্ববিজয়ীর শিরোপা অর্জনের পর ২০০০ সালে ইউরোপ বিজয়ী হয়। পরপর দুু'দুটি ট্রফি, দারুণ ব্যাপার কী বলো?!
কোনো একই দেশের পরপর দুটো ট্রফি জেতার গল্প তো শুনলে, কিন্তু একই মানুষ দু'বার দু'ভাবে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছেন এমন নজিরও আছে নাকি? তোমরা শুনলে অবাক হবে যে এমন ঘটনাও সত্যিই ঘটেছে।
মারিও জাগালো |
ব্রাজিলের মারিও জাগালোর নাম তোমরা হয়ত শোনোনি তবে এই অসাধারণ ফুটবলারটি প্লেয়ার হিসেবে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর দলের ম্যানেজার হিসেবে ১৯৭০ সালে আর অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসেবে ১৯৯৪ সালেও ব্রাজিল দলকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জেতার পথ দেখান। ভাবা যায়, একটা দেশ যারা সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে তার মধ্যে চার চার বার এই মানুষটির অসামান্য অবদান রয়েছে।
তবে এমনটা কিন্তু একমাত্র ঘটনা নয়, জার্মান কিংবদন্তী ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ঠিক এভাবেই ১৯৭৪ সালে প্লেয়ার হিসেবে আর ১৯৯০ সালে জার্মান দলের ম্যানেজার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী থেকেছেন।
আচ্ছা এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে কি এমন অভাবনীয় ঘটনা ঘটার কোনও সম্ভাবনা আছে নাকি? তোমরা একদম ঠিক ধরেছ, ফ্রান্সের ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন দিদিয়ের দেশঁ এবছর ফ্রান্স দলের প্রধান কোচের ভূমিকায়.... তিনে তিন হবে নাকি? উত্তরটা জানতে আরও ক'টা দিন অপেক্ষা করতে আমাদের সব্বাইকে।
জানো তো, একবারও বিশ্বকাপ জেতেনি, এমন টিমদের মধ্যে মেক্সিকো হচ্ছে একটি দেশ যারা সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে।
বলো তো, কতবার.....?
দশ নয়, ছয় নয় বরং দশে ছয় ষোলোবার! মানে, সিক্সটিন টাইমস!!!
তোমরা যারা ফুটবলপ্রেমী লিটল মাস্টার তারা নিশ্চয়ই মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারের খেলা দেখতে পাগল পাগল? তেমনই বড়দের কাছেও পেলে, মারাদোনা, ইউসেবিও, মিশেল প্লাতিনির অসামান্য সব গোল আর ফুটবল স্কিলের গল্পও শুনে থাকবে, হু ইজ দ্য বেস্ট এর লড়াই নিয়ে বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গেও কতই না ফাইটিং হয়ে যায়! কিন্তু জানো কি, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী গোল করেছেন যে খেলোয়াড় তিনি এদের কেউই নন! তবে?
এই রেকর্ডটি করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন জার্মানির মিরোস্লাভ্ ক্লোজে। সব চাইতে বেশীসংখ্যক মোট ১৬টি গোল করে!
তবে পিছিয়ে নেই রোনাল্ডোও, তোমাদের প্রিয় এই ন্যাড়ামাথা ব্রাজিলিয়ান কিন্তু ১৫টি গোল করে সেকেন্ড পজিশনে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন!
এ তো গেল সবচেয়ে বেশী গোল করার রেকর্ড, কিন্তু তোমরা কখনও ভেবেছ ৮৮ বছর আগে শুরু হওয়া ইয়াব্বড় বলটিকে নিয়ে ছুটোছুটির এই খেলাটিতে লুকিয়ে আছে আরোই কত মজার মজার গল্প আর হাজারো রােমাঞ্চকর তথ্য....এক এক করে সেই গল্পগুলোই আমরা করি চলো....
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল দেওয়ার রেকর্ড আজও অক্ষুণ রেখেছেন ক্যামেরুনের রজার মিলার।
১৯৯৪ সালে তিনি যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪২ বছর ৩৯ দিন। আর গোল করার পরে সে-কি উল্লাস! আহা! নেচে নেচে দর্শকদের বিমুগ্ধ করেছিলেন মিলার, দর্শকরাও চেয়ার ছেড়ে উঠে হাততালি দিয়ে তার গোল সেলিব্রেশনের মুহূর্তটি সমান তালে উপভোগ করেছিল।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বেবেতোকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ক্যামেরুনের রিগবার্ট সং। সবচেয়ে কম বয়স মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপে লাল কার্ড হজম করার রেকর্ড এটিই। ১৯৯৮ সালে আবার এক মজার ঘটনা ঘটান রিগবার্ট, অদ্ভুত এক চুলের স্টাইল করে মাঠে নামেন তিনি। চুলের স্টাইল অপরিবর্তিত থাকার পাশাপাশি লাল কার্ড খাওয়াও থেমে থাকেনি তাঁর। চিলির বিপক্ষে আবারও তিনি লাল কার্ড দেখেন। ঘটনার ১৬ বছর পর ক্যামেরুনের দলে সুযোগ পায় রিগবার্টের কাজিন অ্যালেক্স সং। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেই তাঁর মতনই লাল কার্ড দেখেন এবং পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখেন। বিশ্বকাপের মতন আসরে একই পরিবারের ৩টে লাল কার্ডের ঘটনা আর নেই। লাল কার্ড দেখারও রেকর্ড হয় তবে বলো!
বিশ্বকাপের মতন আসরে গোলকিপার হয়ে প্রতিপক্ষের শিবিরে ফ্রি কিক নেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই সাহসের কাজটিই করেছেন হোশে লুই চিলাভার্ট।
১৯৯৮ বিশ্বকাপ আসরে প্রথম কোনও গোলকিপার গোল করার খুব কাছেই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্যারাগুয়ের এই গোলকিপারের গোলার মত দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দেন বুলগেরিয়ান গোলকিপার। ২০০২ সালেও স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে মাঝমাঠ থেকে নিয়েছিলেন অসাধারণ এক ফ্রি কিক। সেটাও ঠেকিয়ে দেন গোলকিপার।
আবার, বিশ্বকাপে প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারা খেলোয়াড় হচ্ছেন ব্রাজিলের ভালদেমার ডি ব্রিটো। ১৯৩৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে তাঁকে এই ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়।
বুঝতেই পারছ, এরকম কতই না অজানা আর মজার তথ্য আছে এই খেলাতে.....গোল, পেনাল্টি, ফাউল, লাল কার্ড এসব পেরিয়েও এই একটামাত্র বলকে নিয়ে তৈরী হয়েছে কত কি!
তোমাদের মতই “মাই-বল, মাই-বল” এর লড়াই এই বড় বড় চ্যাম্পিয়নসরাও করে কিন্তু! সেই প্রথম বিশ্বকাপে ফিফার নিজস্ব কোনও বলই ছিলো না। দলগুলোর যার যার নিজস্ব বল দিয়ে খেলা হতো। সেবার ফাইনালে বল নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যায় দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। দুই দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে খেলতে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে খেলা হবে আর দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের।
প্রথমার্ধে খেলা হয়েছিল এই বলটি দিয়ে |
এটি ছিল দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবহৃত বল |
মজার ব্যাপার হলো, প্রথমার্ধে নিজেদের বল দিয়ে ২টি গোল দেয় আর্জেন্টিনা। আর দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল দিয়ে উরুগুয়ে দেয় ৪টি গোল। ফলে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। তাহলে কি এই টিমগুলোর যার যার বল তাদের জন্য লাকি? হতেও পারে, কি বলো!
আবার জানো ত, ফাইনালে ৩ গোলের ব্যবধানই সর্বোচ্চ জয়। আর এই তিনবারের সঙ্গেই অদ্ভুতভাবে যুক্ত ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে ফাইনালে সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় তারা। আর ১৯৭০ সালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় দলটি। বড় ব্যবধানে দুইবার জিতলেও একবার হারের মুখও দেখে তারা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হারে দলটি।
১৯৫৪ বিশ্বকাপ : অপ্রতিরোধ্য হাঙ্গেরি দল |
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ স্টেজ ও নকআউট ম্যাচ মিলিয়ে ফ্র্যাঙ্ক পুসকাসের দুর্ধর্ষ হাঙ্গেরি মোট ২৭ টি গোল করে এবং একটি ম্যাচও হারেনি কিন্তু শেষে পশ্চিম জার্মানির কাছে ফাইনালে ৩-২ গোলে হেরে যায়। ব্যাড লাক বোধহয় একেই বলে, তাই না?
১৯৫৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে যেসব দল বিদায় নেয় অদ্ভুত ভাবে হেরে যাওয়া কোন দলই একটিও গোল করতে পারে নি!
বিশ্বকাপ জয় এখন পর্যন্ত ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। ১৯৩০ ও ১৯৫০ এর বিশ্বকাপ ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপ ফাইনালে ইউরোপের অন্তত একটি দল বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেইছে। গত ২০ আসরের মধ্যে ১১টি ইউরোপ (ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড) ও ৯টি শিরোপা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলিই (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে) জিতেছে।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলের ম্যাচ ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত অস্ট্রিয়া বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ। অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলে ম্যাচটি জিতে নেয়। সাত সাতটি গোল, চারটিখানি কথা নয় মোটেও!
আচ্ছা, আমরা সবাই মিলে টিভির সামনে বসে এই যে হৈ হৈ করে দিন - রাত জেগে ফুটবল খেলা দেখি, এমনকি লাইভ টেলিকাস্ট, যখন যে দেশে খেলা হচ্ছে তখুনি দেখি, তা এই খেলাটি প্রথম কবে টিভির পর্দায় আসে বলতে পারো? ১৯৫৪ সালে। বিশ্বকাপের খেলা সেবারই প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এ সময় সারা বিশ্বে এটি ছিল সর্বাধিক প্রচারিত ক্রীড়া ইভেন্ট।
সেই সময়ের আরও একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার শোনো, নম্বর ছাড়া জার্সি! শোনোনি ত! এখন কল্পনাই করা যায় না। জার্সি নম্বরই ত খেলোয়াড়ের পরিচয়! শুধু নম্বর শুনে চোখ বুজেই তোমরা বলে দিতে পারো প্লেয়ারের নাম! অথচ, একটা সময় ছিল যখন জার্সিতে কোনও নম্বর লেখা থাকত না। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথমবারের মতো জার্সিতে নম্বর লেখা হয়েছিল!
১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে ঘটেছিল এক অভিনব ব্যাপার, অংশগ্রহণকারী দেশগুলির জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে আসে ইরান।
আচ্ছা তোমাদের মনে হয়, গোল এই পেল্লাই বলটির নাম ফুটবল ছাড়া আর কিছু হতে পারে ? না তো ? কিন্তু না, তা নয়, আমেরিকা আর কানাডায় আমাদের প্রিয় ফুটবলকেই ওরা সকার বলে! বিশ্বের আর কোনও দেশ কিন্তু এমন নামে ডাকে না ফুটবলকে! সকার, বেশ মজার!
ছোটরা সবাই হয়ত এঁর নাম জানো না, কিন্তু কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস্ হচ্ছেন একমাত্র ক্রীড়াবিদ, যিনি ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় বিশ্বকাপেই অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৪ সালে অ্যান্টিগুয়ার হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশ নেন তিনি। একসাথে দু'দুটো খেলায় পারদর্শী! সুপার প্লেয়ার!!
এবার চুপিচুপি তোমাদের আরও একটা মজার গল্প বলি, ১৯৩৮ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইতালির জুসেপ্পে মিয়াজ্জা পেনাল্টি শট নিচ্ছিলেন।
জুসেপ্পে মিয়াজ্জা |
বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করলে, অনেক অনেক গোল দিলে বা দুর্দান্ত সব গোল বাঁচালে গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট বা গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কার পাওয়ার কথা তো শুনেছ তোমরা। কিন্তু বিশ্বকাপে গোল দিতে পারলে গাড়ি পাওয়া যায় শুনেছ কখনও? ঠিক এমনটাই হয়েছিল ১৯৯০ সালে। সেবার প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। দলের খেলোয়াড়দের উদ্বুদ্ধ করতে ছিল অভিনব পুরস্কার..... যদি কেউ গোল করতে পারে, তাহলে তাকে দেওয়া হবে একটি রোলস রয়েস গাড়ি। অনভিজ্ঞ দলটির ভালো করার সুযোগ ছিল খুবই কম। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার আগে তারা ২টি গোল দিতে সমর্থ হয়। আর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সে দেশের রাজা শেখ মোহাম্মদের কাছ থেকে দুই গোলদাতা ইসমাইল মোবারক ও থানি জুমা একটি করে রোলস রয়েস গাড়ি উপহার পান। তোমরা যারা হট হুইলস্ পাগল, অনেক অনেক গাড়ি নিয়ে মেতে থাকো সারাদিন তারা একটু মাঠে ঘাম ঝরাবে নাকি ফুটবল নিয়ে? কে জানে তোমাদের বরাতেও যদি জুটে যায় এমন অসামান্য একটা তোফা!!
গ্রীন হাউস এফেক্ট-এর ধাক্কায় দিন দিন যে গরম বাড়ছে সে খবর আমাদের সকলেরই জানা। গরম থেকে বাঁচতে সামার ভেকেশনও এক্সটেন্ড করা হয় তোমাদের, তাই না? তা জানো কি, এই গরমের জন্যই বিশ্বকাপ ফুটবলেও একটি নতুন ব্রেক চালু হয়?
কুলিং ব্রেক, ২০১৪ বিশ্বকাপ |
২০১৪, অর্থাৎ গত বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর রাউন্ডে হল্যান্ড - মেক্সিকো ম্যাচের তখন ৩০ মিনিট চলছে। হঠাৎ করেই রেফারির বাঁশি। কোনও ধরনের ফাউল ছাড়াই খেলা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়। এমনিতে তোমরা জানো এক এক অর্ধে ৪৫ মিনিটের খেলার পর বিরতি দেওয়া হয়। ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রচণ্ড গরমে জলপানের জন্য বিরতি দেওয়া হয় খেলা শুরুর আধঘন্টার মাথায়। সেবারই প্রথম এই নিয়ম চালু করা হয়। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী তাপমাত্রা যদি ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর হয় তাহলে ম্যাচের ৩০ মিনিট হলে বিরতি দিতে পারবেন ম্যাচ রেফারি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম চালু হয় “কুলিং ব্রেক”,, ইটস কুল না!!
সবশেষে আমার লিটল্ চ্যাম্পস্ বন্ধুদের জন্য একটা ছোট্ট প্রশ্ন রাখি....... আচ্ছা বলো তো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে কোনো দলকে বিশ্বকাপের মূলপর্বে গ্রুপ আর নক আউট স্টেজ মিলিয়ে কমপক্ষে ক'টা ম্যাচ জিততে হবে? খুব সোজা এই হিসেবটা চটপট সেরে ফেলে আমায় জানিও কিন্তু!
তথ্যসূত্র :
১. https://en.m.wikipedia.org/wiki/FIFA
২. www.fifa.com
৩. https://www.bbc.com/bengali/amp/news-44357183
৪. http://www.espn.in/football/fifa-world-cup/4/blog/post/3511751
ছবি : Wikipedia, Getty Images, Pinterest
অসাধারণ, একমাত্র আপনিই পারেন এত সুন্দর করে লিখতে। কত কিছু জানা হয়ে গেল। দারুণ দাদা।
ReplyDelete