"কী ব্যাপার কালু? কী ব্যাপার লতাদি? আপনাদের মুখ এত শুকনো কেন?"
দাদু উদ্বিগ্ন হয়ে এগিয়ে গেল।
"আসলে বিশ্বদা", কালু বলতে একটু দোনামনা করল।
"কী হল কালু, আবার চুপ করে গেলে কেন?"
"বিশ্বদা, আমার ছাগলটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।"
"ওহ্, এই ব্যাপার, দ্যাখো গিয়ে চারপাশটা। কাছাকাছি কোথাও আছে।"
"না বিশ্বদা, কোথাও নেই। আমি ভালো করে খুঁজলাম। আর লতাদির পাখিগুলোও উড়ে গেছে।
লতাদির নাতি ভুলু বলছিল, রোজ সকালে আপনার নাতি সবার বাড়ি ঢুকে ঢুকে সব পাখির খাঁচা খুলে দেয়- মুরগী, হাঁস সবাইকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বের করে দেয়। গরু-ছাগল সবার খুঁটির দড়ি খুলে দেয়। এভাবে চললে তো আমরা মুশকিলে পড়ে যাব বিশ্বদা।"
"আসলে বিশ্বদা", কালু বলতে একটু দোনামনা করল।
"কী হল কালু, আবার চুপ করে গেলে কেন?"
"বিশ্বদা, আমার ছাগলটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।"
"ওহ্, এই ব্যাপার, দ্যাখো গিয়ে চারপাশটা। কাছাকাছি কোথাও আছে।"
"না বিশ্বদা, কোথাও নেই। আমি ভালো করে খুঁজলাম। আর লতাদির পাখিগুলোও উড়ে গেছে।
লতাদির নাতি ভুলু বলছিল, রোজ সকালে আপনার নাতি সবার বাড়ি ঢুকে ঢুকে সব পাখির খাঁচা খুলে দেয়- মুরগী, হাঁস সবাইকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বের করে দেয়। গরু-ছাগল সবার খুঁটির দড়ি খুলে দেয়। এভাবে চললে তো আমরা মুশকিলে পড়ে যাব বিশ্বদা।"
"আপনার মুখ চেয়ে পিংলুকে কেউ কিছু বলে না। গাঁয়ের সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু আপনার নাতি পিংলুর দুষ্টুমি তো বন্ধ হচ্ছে না।"
"হুমম্", দাদুর কপালে ভাঁজ।
"কালু, তুমি এখন বাড়ি যাও। লতাদি আপনিও বাড়ি যান। আমি দেখি কী করতে পারি।"
দাদু বলতে বলতে বাড়ির ভিতরে ঢুকল।
পিংলু ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে সব দেখছিল।
"পিংলু, একবার এদিকে এসো।" দাদু গম্ভীর গলায় পিংলুকে ডাকল।
"আমায় ডাকছ দাদু?" পিংলু দাদুর সামনে।
"তুমি নাকি সবার বাড়িতে গিয়ে গিয়ে পশুপাখিদের বাইরে ছেড়ে দাও, এটা কি সত্যি?"
"হ্যাঁ, দাদু", পিংলু মাথা নিচু করে বলল।
"কেন?" দাদু চিন্তিত।
"বা রে!- মামাই তো বলে- ‘পিংলু, পশুপাখিদের খুব ভালোবাসবি। ওরা যেন কখনো কষ্ট না পায় দেখিস।'
আমি সেদিন লতাদিদার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম- দেখলাম মুনিয়াগুলো কি ছট্ফট্ করছে। তাই তো খাঁচার দরজাটা খুলে দিলাম।
কালুদাদুর ছাগলটা সারাদিন দড়িতে বাঁধা থাকে। সেদিন দেখলাম- ছাগলটা খুব দড়ি ধরে টানাটানি করছে। নিশ্চয়ই ও দৌড়তে চাইছিল - ঠিক যেমন আমি দৌড়োই, তাই না দাদু? আমার দেখে খুব কষ্ট হল, তাই তো দড়িটা খুলে দিলাম।
শান্তিপিসির বাড়ির হাঁসগুলোকে যেই বের করে দিলাম বাড়ির বাইরে, অমনি সেগুলো পুকুরে লাফ দিল। কী সুন্দর লাগছিল দাদু হাঁস আর হাঁসের বাচ্চাগুলোকে! আমি তো ড্রইংও করলাম, এই দ্যাখো দাদু।"
পিংলু ড্রইং খাতাটা এগিয়ে দিল। দাদু দেখল হাঁস আর তাদের ছানারা পরম নিশ্চিন্তে জলে ভেসে বেড়াচ্ছে-পিংলু খুব সুন্দর এঁকেছে ছবিটা।
দাদু এক এক করে ড্রইংখাতার পাতাগুলো উল্টোতে লাগল। একটা ছবিতে খাঁচার দরজা খোলা - পাখিগুলো এক এক করে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। কী সুন্দর এঁকেছে পিংলু! এক এক করে সব ছবিগুলোই দেখল দাদু। পিংলু ছবি আঁকে দাদু সেটা জানত- কিন্তু তার ছবি আঁকার পিছনে এই সুন্দর ভাবনার কথা দাদু জানত না।
দাদু মনে মনে খুব খুশি হল। পিংলুর পশুপাখিদের প্রতি এত মায়া দাদুকে খুব আনন্দ দিল। কিন্তু তার সাথে সাথে দাদু ভাবতে লাগল যে কী করা যায়। পিংলুর যুক্তি দাদু বুঝেছে, আবার এদিকে প্রতিবেশীদের কথাটাও তো ভাবতে হয়। কী করা যায়, এই নিয়ে কথা বলতে দাদু মামাইকে ডাকল। মামাই আসার পর দাদু পিংলুকে বলল-"পিংলু, তুমি বাগানে গিয়ে খেলো, আর কোনো দুষ্টুমি কোরো না।"
পিংলু মাথা নেড়ে সায় দিল আর একটা বল নিয়ে দৌড়ে বাগানে চলে গেল।
"সাম্য, সব শুনলি তো পিংলু কি করেছে।"
দাদু এক এক করে ড্রইংখাতার পাতাগুলো উল্টোতে লাগল। একটা ছবিতে খাঁচার দরজা খোলা - পাখিগুলো এক এক করে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। কী সুন্দর এঁকেছে পিংলু! এক এক করে সব ছবিগুলোই দেখল দাদু। পিংলু ছবি আঁকে দাদু সেটা জানত- কিন্তু তার ছবি আঁকার পিছনে এই সুন্দর ভাবনার কথা দাদু জানত না।
দাদু মনে মনে খুব খুশি হল। পিংলুর পশুপাখিদের প্রতি এত মায়া দাদুকে খুব আনন্দ দিল। কিন্তু তার সাথে সাথে দাদু ভাবতে লাগল যে কী করা যায়। পিংলুর যুক্তি দাদু বুঝেছে, আবার এদিকে প্রতিবেশীদের কথাটাও তো ভাবতে হয়। কী করা যায়, এই নিয়ে কথা বলতে দাদু মামাইকে ডাকল। মামাই আসার পর দাদু পিংলুকে বলল-"পিংলু, তুমি বাগানে গিয়ে খেলো, আর কোনো দুষ্টুমি কোরো না।"
পিংলু মাথা নেড়ে সায় দিল আর একটা বল নিয়ে দৌড়ে বাগানে চলে গেল।
"সাম্য, সব শুনলি তো পিংলু কি করেছে।"
দাদু বলল।
"হ্যাঁ, বাবা।"
সাম্য পিংলুর মামার নাম।
"এবার বল্ তো কী করি আমি?" দাদু চিন্তিত।
"বাবা, তুমি এক কাজ করো।"
"হ্যাঁ, বাবা।"
সাম্য পিংলুর মামার নাম।
"এবার বল্ তো কী করি আমি?" দাদু চিন্তিত।
"বাবা, তুমি এক কাজ করো।"
এরপর দাদুর সাথে মামাইয়ের অনেকক্ষণ কথা হল।
পিংলু একটু হতভম্ব। দাদু তো তাকে বকল না!
পিংলু একটু হতভম্ব। দাদু তো তাকে বকল না!
পরের দিন সকালে পিংলু অবাক। আজ রবিবার। গ্রামের অনেক লোক পিংলুর মামাবাড়িতে। তার মধ্যে কালুদাদু, লতাদিদা, শান্তিপিসিকেও দেখতে পেল পিংলু।
শান্তিপিসি দাদুকে বলল-"কী ব্যাপার বিশ্বজেঠু? সবাইকে সকাল সকাল আসতে বললেন?"
দাদু বলল- "একটা কথা বলার আছে আপনাদের সবাইকে।"
সবাই উৎসুক।
এরই মধ্যে পিংলুকে দেখতে পেয়ে দাদু কাছে ডাকল।
পিংলু ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এল। তারপর চুপ করে দাদুর পাশে বসল।
দাদু একটু গলাখাঁকারি দিয়ে বলল- "শোনো সবাই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, পিংলু তোমাদের বাড়িতে গিয়ে সব পশুপাখিকে ছেড়ে দেয়। আসলে কী জানো তো, পিংলু দাদুভাই কিন্তু কোনো দুষ্টুমি করে না। এই যে তুমি আমি যখন ইচ্ছে যেখানে খুশি যেতে পারি, পিংলু দাদুভাই চায় সব পশুপাখিরাও যাতে নিজের ইচ্ছেমত একটু ঘুরে বেড়াতে পারে। এখন আমি পিংলু দাদুভাইকে কী করে বকি বলো? ও তো যা করেছে ওর মায়াবোধ থেকে করেছে। এবার তোমরাই বলো যে কী করা যায়? আচ্ছা আমি একটা কথা বলছি- তোমরা পশুপাখিগুলোকে মাঝে মাঝে যদি একটু ছেড়ে দাও..." এই পর্যন্ত বলে দাদু একটু চুপ করল।
কালুদাদু, লতাদিদা, শান্তিপিসিরা নিজেদের মধ্যে কী আলোচনা করতে লাগল।
তারপর সবাই মিলে দাদুকে বলল-"বিশ্ববাবু, আপনি যখন বলছেন...ঠিক আছে। আমরা আমাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, পাখি সবগুলোকে সকালবেলা ছেড়ে দেব।"
এরপর কী হল জানো?
সবাই অবাক হয়ে দেখল, ওরা সবাই ছাড়া পেয়ে মনের আনন্দে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সন্ধেবেলা ওরা সবাই ঠিক নিজে নিজে বাড়ি ফিরে আসছে। এমনকী, মুনিয়াগুলোও আকাশে উড়ে বেড়িয়ে সন্ধেবেলা আবার ফিরে এল।
সবাই তো অবাক। আসলে কী জানো তো, কাউকে একটু স্বাধীনতা দিলে সে ভালোবাসার মর্যাদা নিশ্চয়ই রাখে। পশুপাখিগুলো তো জানে, বাড়িতে তাদের ভালোবাসার জন্য সবাই আছে-ঠিক আমাদের মত। আমরা যেমন চারদিকে ঘুরে বেড়িয়ে আবার বাড়িতে ফিরে আসি, ওরাও তেমনি ওদের ঘরে ফিরে আসে। ভালোবাসলে কাউকে বন্দী করতে নেই, তাকে মুক্ত করতে হয়। যদি ফেরার ইচ্ছে হয়, সে এমনিই ফিরে আসে।
আজ গাঁয়ের লোকেরা যা শিখল, সব পিংলুর জন্যই শিখল। পিংলু তো মহাখুশি। সে যতদিন মামাবাড়িতে থাকল, রোজ গিয়ে ওর ছোট্ট বন্ধুদের দেখে আসত। কিন্তু এবার শীতের ছুটি শেষ। ওকেও তো এবার ঘরে ফিরতে হবে। তাই পিংলুও আজ বাড়ি ফিরবে-মুক্ত জীবনের আস্বাদ নিয়ে নিজের ঘরে। কারণ সে জানে, ঘরে বাবা-মা তার জন্য অপেক্ষা করছে। আর বাবা-মা তো তাকে খুব ভালোবাসে।
এবার তোমরা বলো , পিংলু কি আদৌ কোনো দুষ্টুমি করেছে?
অলঙ্করণ : আবির
No comments:
Post a Comment