Pages

গল্পের ঝুলি : লুকোচুরি : প্রদীপ কুমার বিশ্বাস



সোমবার যে হঠাৎ করে ছুটি হয়ে যাবে আর সারাদিন ধরে এইরকম অদ্ভুত আর মজার ঘটনাগুলো যে ঘটবে, তার আগাম খবর আমার কাছে ছিল, কিন্তু বিশ্বাস হয়নি। রবিবার সন্ধ্যেয় মধুদাদা এরকমই একটা আভাস আমাকে দিয়েছিল। তখন অঙ্কের বিশাল হোমটাস্ক শেষ করতে এত ব্যস্ত ছিলাম, বুঝতেই পারিনি। তবে শেষ রাতের দিকে রাত-জাগা পাখিগুলো বোধ হয় এরকমই কথাগুলোই টুই- টুই করে গান গেয়ে বলছিল। আমার ওদের গানের কথাগুলো বিশ্বাসই হয়নি।

আমাদের টাউনশিপের বাইরেই চওড়া হাইওয়ে। সেটা ধরে কিছুটা গেলেই একটা বড় ব্রিজ পড়ে। স্কুল-বাস যখন রোজ এই ব্রিজে ওঠে, আমরা সবাই দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ফেলি। এরপরেই আমাদের স্কুল।শুরু হবে, আবার একটা বিরক্তিকর লম্বা সময়।

আজ আমাদের স্কুল বাস সেই রাস্তায় ব্রিজ পার হবার ঠিক আগে গতি ধীর করল । কিন্তু ব্রিজ পার না হয়ে দেখি ইউ-টার্ন নিচ্ছে। আমরা কয়েকজন দু’কান-কাটা ছাত্র ছাড়া 
বাকি সবাই হোমটাস্কের খাতাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে ব্যস্ত। তাই ভাল ছেলেরা কিছু বুঝতে না পারলেও ব্যাপারটা আমাদের নজর এড়ালো না। কিন্তু ততক্ষণে আমরা একে অন্যকে ইশারা করছি চুপ থাকতে। মনে হয় আজ হঠাৎ কোনও কারণে স্কুল ছুটি। সে খবরটা আমাদের বাসের কন্ডাক্টর নিলুদা হয়ত এইমাত্র পেয়েছে স্কুল থেকে। মনে হচ্ছে সেই জন্যই বাস ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু ফিরে তো যাচ্ছে সেই টাউনশিপেই আর তারপর বাড়িতে। আজ হোমটাস্ক নেই, কিন্তু নিস্তারও নেই। পুরানো পড়া রিভাইজ করো, লেখো আর যে টিফিনটা দিয়েছিলাম সেইটা দুপুরে খেয়ে নিয়ে আবার অঙ্ক করতে বসে যাও। কিন্তু যদি বলি আগে একটু ছবি আঁকি কিম্বা পেয়ারা গাছে আসা সবুজ টিয়াদের সাথে কথা বলি তারপর না হয় করবো সে গুড়ে বালি।

কিন্তু এ কী! বাস তো টাউনশিপের রাস্তা না ধরে বাঁদিকে ঘুরে জঙ্গলে যাবার এবড়ো- খেবড়ো রাস্তাটা ধরে একটু হেলে-দুলে কিন্তু বেশ ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে। এতক্ষণে ব্যাপারটা বাকি সবার নজরে পড়েছে। আমরা সবাই চেঁচিয়ে উঠলাম,
“ ড্রাইভার-দাদা, পাগল হলে নাকি?” 

ততক্ষণে নিলুদা ড্রাইভার-দাদার কেবিনে ঢুকে পড়েছে। এক মুহূর্তের মধ্যে দুজনেই কেবিন থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে ভয় পাওয়া ফ্যাসফেঁসে গলায় যতটা সম্ভব উঁচু আওয়াজে বলে,
“বাসের স্টিয়ারিং, ব্রেক সব এক সাথে ফেল করেছে”।

গেটের কাছে এসে আমাদের উদ্দেশ্যে দু’জনে এবারে চেঁচিয়ে উঠলো,
“আরে ননীগোপালের দল, কুঁড়ের বাদশা সব, বুঝতে পারছ না কী হতে চলেছে? বাসটা এখন খুব ধীরে চলছে, এই সময় লাফিয়ে নেমে পড়ো সব। ভয়ের কিছু নেই। এই দেখ, আমরাও নামছি”।

ড্রাইভারদাদা আর নিলুদা ঝাঁপিয়ে নেমে তো পড়ল, কিন্তু সেই সঙ্গে দারুণ একটা মজার ব্যাপার হল। মোটা চেহারার ভুঁড়িওয়ালা ড্রাইভারদাদা ঝাঁপিয়ে নামতে গিয়ে জঙ্গলের কাঁকর-মাটিতে টাল সামলাতে না পেরে দু’বার গড়াগড়ি খেয়ে, চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। তখন তার ভুঁড়িটা হাপরের মত ওঠানামা করছিল। সেই দেখে জঙ্গলের দু’পাশের লম্বা গাছগুলো থেকে বাঁদরের দল খিক-খিক করে একসাথে হেসে উঠলো। বাসে বসে থাকা আমরাও বাদ গেলাম না।

না, আমরা কেউ ঝাঁপিয়ে নামিনি। তার মানে এই নয় যে আমরা ভয় পেয়ে নামিনি, বরং উল্টোটাই । বনের এই রাস্তাতে আমরা আগে তো আসিনি, বেশ মজা লাগছিল যেতে। বাসটার তেমন কিছু হয়নি মনে হয়। আর তেমন হলে বাস কি অন্তত আমাকে বলতো না? একটু আগেই তো আমাদের সাথে-সাথে ড্রাইভার দাদার দুর্গতি দেখে বাস তো হাসছিল। বিশ্বাস হল না তো? আমাদের যেমন ভাষা আছে, তেমনি বাকি সব জীব আর যন্ত্রপাতি এদেরও আছে। একটু চেষ্টা করলেই আমরা সকলেই আমাদের চারপাশের সবার ভাষা বলতে হয়ত পারব না, কিন্তু বুঝতে পারব। মজার কথা হল, আমরা ওদের ভাষা না বুঝলেও ওরা আমাদের প্রতিটি কথা বোঝে। আমি অবশ্য ওদের ভাষা তাড়াতাড়ি শিখেছি, সেটা মধুদাদার শেখানোর গুণে। পরে আমিও, আমাদের স্কুলের দু’চারজন বন্ধুদের শিখিয়েছি।

প্রায় প্রতিদিনই বাসে ঢুকতেই বাস আমাকে কিছু-না-কিছু বলে। ওর ওপর ড্রাইভার আর গ্যারাজের মেকানিক প্রায় প্রতিদিনই খুব অত্যাচার করে। একটু বেশি তেল খেলে বা ঠিকঠাক দৌড়াতে না পারলে বেশ মারধর করে । ও প্রায়ই এখন বলে, রোজ-রোজ একই রাস্তা ধরে স্কুল আর গ্যারাজ যেতে তার আর ভাল লাগছে না। আমাদেরও অবশ্য তাই, কিন্তু কী আর করা যায়?

আজকাল ও প্রায়ই বলে, খুব জলদিই একটা স্কুলে যাওয়ার দিনে হঠাৎ করে ছুটি হবে আর ও সবার জন্যে কিছু একটা মজার ব্যাপার করবে। আমরা ওকে বারণ করি বটে, তবে এমন একটা কিছু হলে কিন্তু হয় বেশ। আজ এই বাস জঙ্গলের রাস্তায় আসার আগে একটাও কথা বলেনি।জঙ্গলের পথে এতটা চলবার পর বলে উঠল,
“বন্ধুরা ভয় পাওনি তো কেউ?” 
এটুকু কথা, দু’একজন ছাড়া, বাকি সবাই বোঝে। সবাই একসাথে বলে উঠলাম,
“একটুও না। কিন্তু এইবার তুমি একটু জিরিয়ে নাও । এই এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় চলতে তোমার কষ্ট হচ্ছে তো?” 
বাস বললে,
“আর একটু কাছেই একটা বড় মাঠ, তারপরেও রাস্তা আছে, কিন্তু আমি সেখানে তোমাদের নিয়ে যেতে পারবো না”। 
আমরা সমস্বরে বলে উঠি, “ কিন্তু কেন?”
বাস বলে,“সেটা ঢালু রাস্তা, সিধা নেমে গেছে নদীর দিকে। আমি হয়ত টাল সামলাতে পারব না। তাছাড়া সেখানে গিয়েই বা কাজ কী? তার চেয়ে আর একটা জায়গা অবধি পৌঁছাতে পারলে ভালো। আমার কাছে একটা দারুণ খবর আছে যে সেইখানে আজ জঙ্গলের সবাইকে নিয়ে বেশ দারুণ মজার কিছু হবে, আর সেই জন্যেই তো আসা এইখানে”।

পিলু আমাদের সবার ছোটো, রোজ বসে কেবিনের একদম কাছে। সে তার পাতলা রিনরিনে গলায় বললে,
“তা এতক্ষণ চেপে রেখেছিলে কেন?”
বাস বললে 
“ সে অনেক কথা, একটু জিরিয়ে নিয়ে বলছি”।

 এই বলতে-বলতে, বাস থেমে গেল।

দুপাশে গভীর জঙ্গল আর ঝোপ-ঝাড়। আমরা সবাই এখানে নামতে ইতস্তত করছিলাম। কয়েকজন এই সময় দেখতে পেল, ঝোপের আড়ালে বেশ কতকগুলো কালো-কালো মুখ। কেউ-কেউ আবার নাকি ভালুক দেখেছে!

হঠাৎ দেখি, এক বড় ভালুক ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল। তার দু'হাতে, বড়-বড় করনেটো আইসক্রিমের মত দেখতে দুটো সবুজ পাতার ঠোঙ্গা ।

বড় ভালুক আমাদের দিকে একগাল হেসে বললে,
“নেমে এস বন্ধুরা । তোমাদের ক্লান্তি দূর করবার জন্যে, মৌমাছিরা তাদের চাক থেকে টাটকা মধু পাঠিয়েছে।”

ভালুকের জড়ানো শব্দ, আমি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেনি । বাস থেকে নেমে আসতেই বড় ভালুক আমাকে জড়িয়ে ধরে 
“কী ভাগ্নে? কেমন আছো?” এই বলে আমার হাতে মধুর ঠোঙ্গাগুলো ধরিয়ে দিল । সেই দেখে বাকি সব ছেলেমেয়েরা দুদ্দাড় করে নেমে পড়ে আমার হাত থেকে ঠোঙ্গা দুটো কেড়ে নিল । ততক্ষণে ভালুকমামি ভাই-বোনদের সাথে নিয়ে আমাদের কাছে আরো অনেক ছোটো ছোটো মধু ভরতি ঠোঙা নিয়ে হাজির। টাটকা মধু দেখে সবাই খুব হ্যাংলামি শুরু করে দিল । তবে দোষ নেই কারো। খাঁটি টাটকা মধু, আমরা এর আগে তো খাইনি কখনো। 

কী আশ্চর্য! ভালুক ভাইবোনগুলো কী সুন্দর পরিষ্কার বাংলায় কথা বলছে । আমাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই এবার ওদের কথা বুঝতে পারল । আচ্ছা কোন মিথ্যেবাদী বলে এরা নাকি মানুষ দেখলেই, দাঁত-নখ দিয়ে আঁচড়ে-কামড়ে পেটের নাড়িভুঁড়ি বার করে দেয়?

সামনেই একটা বিশাল বট গাছ। আমরা ক্লান্ত দেখে মামা, মামি আর ভাইবোনেরা সবাইকে সেই গাছতলায় বসিয়ে নিজেরাও বসলো সেখানে।ভালুক মামা বললে,
“তোমরা কিন্তু বেশ ভাল দিনে এসেছ। এই বনে আজ সারাদিন ধরে উৎসব হবে। অবশ্য এমনিতেই আমাদের মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো উৎসব হয়ে থাকে। কিন্তু আজকের উৎসবটা মহোৎসব। আজ এইদিনে আমাদের সবাইয়ের প্রিয় রাজা শ্রী মধুসূদন আসবেন উদ্বোধন করতে।”

উৎসবের নাম শুনে সবার ছোটো পিলুর মুখে হাসি আর ধরে না । উৎসুক হয়ে সে শুধায়,
“কী কী হয় এই মহোৎসবে ?”
ভালুকমামা তার দিকে তাকিয়ে বললে,
“মেলা বসবে, আর নানারকম খেলা আর নাচ হবে।”
আমাদের মধ্যে ভীতু কেউ একজন কাঁপা-কাঁপা গলায় বলে, 
“ভালুকমামা, জঙ্গলের সব জন্তু-জানোয়াররা কি আসবে নাকি ? মানে যারা খুব হিংস্র তারাও কি আসবে?”

ভালুকমামা কপাল নাক কুঁচকে রাগতস্বরে বললে “কথাটা কে বললে তোমাদের মধ্যে?”
আমরা তো সবাই চুপ হয়ে আছি। সেই দেখে মামা বললে, 
“জন্তু-জানোয়ার বলছ কেন? এখনি বন্ধু না বললেও, বনবাসী তো বলা উচিত ছিল। আর এরকম বোলো না তোমরা কেউ । ভয় পেও না, এই বনে রাজা মধুসূদন থাকেন। তাঁর রাজ্যে সবাই হিংসা ভুলে যায়। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের সব বনবাসীদের আর তোমাদেরও ভাষা বুঝতে-বলতে পারি। এসবই সেটা তাঁরই জন্য” ।

মামি বললে, 
“ তিনি থাকেন সবসময় আমাদের সাথে। কিন্তু তিনি আমাদের সব সময় দেখতে পেলেও, যারা তাঁকে মন দিয়ে ডাকে, তারাই শুধু দেখতে পায়। কিন্তু আজ এই বছরকার মেলার দিন তিনি সবাইকে দেখা দেন। তাঁর সেই হাসিমাখা মুখে কী যে জাদু থাকে কে জানে? বড় বিড়ালের পরিবারও হিংসা ভুলে গেছে।”

আমরা সমস্বরে বলি,
 “তাহলে তারা খায় কী?”
মামা বললে,
“আমাদের এখানে, পাঁচশোর বেশি মহিষ- মহিষীর বিশাল পরিবার । জঙ্গলের মধ্যে এক জায়গাতে তারা খুর দিয়ে খুঁড়ে-খুঁড়ে এক বড় ডোবা মতো বানিয়ে রেখেছে। মহিষীরা সেই ডোবার পাড়ে এসে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়। তারপর বাঁট দিয়ে যা উপচে পড়ে, সেইটাতেই ডোবাটা বিকেল-তক দুধে ভরে টইটম্বুর হয়ে যায়। বড়-বিড়ালের পরিবার সন্ধের পর তাতে সাঁতারও দেয় আর পেটও ভরায়।”
টুম্পা হাঁ করে শুনছিল। বোকার মত, দুম করে বলে বসলো,
“বড়-বিড়ালের পরিবার মানে কি অনেকগুলো বা-আ-ঘ?”
এই মরেছে! ভালুক মামা আবার না ধমক দেয়।আমরা সকলে সমস্বরে টুম্পাকে চুপ করতে ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে উঠি,
“শ:!শ:!”
ভালুক মামা যখন রাজা মধুসূদনের কথা বলছিল, তখন মধুসূদন নাম শুনেই আমার গায়ে কীরকম কাঁটা দিয়ে উঠলো। অরণ্যের এই রাজার মতো আমার মধুদাদাকেও সবাই দেখতে পায় না।

মাঘের কড়া শীতের এক সন্ধ্যেতে হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। নির্জন রাস্তা ধরে, টিউশন সেরে ফেরার পথে ভয় পেয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তা ভুল করেছিলাম। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবো সে উপায় না দেখে আমি প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম। সেই সময়ে আকাশের বিদ্যুৎ-চমকের আলোতে দেখলাম, আমার চাইতে সামান্য বয়েসে বড়ো একটি ছেলে হাতে একটি বাঁশি নিয়ে আমার আগে আগে চলেছে । আর একবার আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতেই দেখি, মধুর মতো তার গায়ের রঙ, মাথাভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল সুন্দর চুড়ো করে বাঁধা। তার মুখে, দারুণ এক ভুবন-ভোলানো, মিষ্টি হাসি। সে, তার সঙ্গের বাঁশির মতো মিষ্টিস্বরে, আমায় বলে, “ভয় পেয়ো না । আমি তোমায় বাড়ির পথে এগিয়ে দিচ্ছি।”

বাড়ির পথে যেতে যেতে, তার সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমি তাকে মধুদাদা বলে ডাকবার অনুমতি নিয়ে নিলাম। বাড়ির  সামনে এসে সে বিদায় নেবার সময় বললে, 
“আমি তোমার সখা। যখনই কোনো বিপদে পড়বে, আমায় ডাক দিলেই আমি আসবো তোমার কাছে।”
সেই থেকে স্কুলের হোমটাস্ক না করতে পারলে, ক্লাসে পড়া ভুলে গিয়ে বলতে না পারলে, এমনকি রাত্রে ঘুমাবার সময় গল্পের বা গান শোনবার দরকার হলেও মধুদাদাকে ডাকলেই, সে সঙ্গে-সঙ্গে হাজির হয়ে মিষ্টি হেসে,যা চাই তাইই দিয়ে দেয়।

মধুদাদার সাথে সবচাইতে বড়ো সুবিধে হল, যে ডাকে সে ছাড়া আর কেউ তাকে দেখতে বা শুনতে পায় না। এইজন্য সব জায়গাতেই ওকে ডাকা যায়।

উৎসবের এইবারের স্বেচ্ছাসেবী ভালুকমামা সপরিবারে আর হনুমান বাহিনীর ছেলেবুড়ো সবাই। বাঁদরের দল, যারা একটু আগে ড্রাইভারদাদার দুর্দশা দেখে খিক খিক করে হাসছিল, তারা গাছে-গাছে লাফাতে-লাফাতে আমাদের পৌঁছে দিলে চারপাশে গাছে ঘেরা একটা ফুটবল খেলার মতো বিরাট মাঠে।


মনে হচ্ছে বাসটা আমাদের নামিয়ে দেবার পর এই মাঠটার কথাই বলেছিল বোধ হয়। থেকে-থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে যে দিক থেকে, সেই দিকে একটু উঁকি দিতেই একটা নদী দেখা যাচ্ছিল । বুঝলাম এর কাছেই সেই ঢালু রাস্তাটা, যেটা সামলাতে পারবে না বলে বাসটা বলছিল বটে।

বড়ো হনুমানেরা একটা বড়ো গাছের তলায় আমাদেরকে বসতে ইশারা করে একঝাঁক সবুজরঙের তোতাপাখিদের আমাদের সঙ্গী হতে বলে গেল। সব গাছেই দেখি নানারকম পাখিতে-পাখিতে ছয়লাপ। অনেকদিন পরে সব দেখা হয়েছে, কিচিরমিচির করলেও আমরা অনেকেই তাদের কথা বুঝতে পারি। ওদের আলাপ শুনে আমাদের অনেকেরই বেশ মজা লাগছিল। এরা আকাশপথে এসেছে বলে সবার আগে পৌঁছে গেছে।

এদের কিচির-মিচির বাড়লে দেখি গাছে-গাছে দোল খেয়ে অন্য অরণ্যের বড় বড় হনুমানেরা আসছে। তাদের সাথে সাথে রয়েছে কাঠবিড়ালির দল। এরা আসতে না আসতেই দেখি জঙ্গলের পূর্ব আর দক্ষিণকোণে ধুলোর ঝড় উঠেছে। তবে কি এখন ঝড়-বাদল শুরু হবে নাকি? আমাদের আশ্বস্ত করে সবুজ তোতাদের একজন আমাদের বলে, বাইসন আর হরিণের পাল আসছে ওই পথে। খুশির সময় ওরা ওইরকমই দৌড়াতে দৌড়াতে আসে। আমাদের অবাক করে দিয়ে জঙ্গলের জলার ধার থেকে আসে অনেকগুলো শেয়ালের দল। সারারাত জেগেও এদের উৎসাহ কম কিছু নয়।

এইভাবেই সব অরণ্যবাসীরা তাদের নিজের-নিজের এলাকা থেকে দলবেঁধে এসে পৌঁছচ্ছে মেলার জায়গায়। জঙ্গলের একমাত্র বাঘের পরিবারও এলো, তবে সবার শেষে, হাই তুলতে-তুলতে। তাদের ঠোঁটে আর গোঁফে টাটকা দুধের সর লেগে রয়েছে। ভালুক মামার পরিবার আর হনুমানেরা, সবাই লেগে পড়েছে অংশগ্রহণকারীদের জমায়েত হবার জায়গা আর দর্শকদের বসবার জায়গা দেখাতে। কোন দলের লোকেরা কোথায় বসবে সেই নিয়ম আমাদের সাথে থাকা তোতাপাখিরা বুঝিয়ে বলছিল।

জঙ্গলের সবাই এলো, কিন্তু হাতিরা কেন এল না এখনো? এই অরণ্যে তাহলে কি হাতিরা থাকে না? সর্দার-তোতা হাসতে-হাসতে আমাদের বলে, “ওরা এখন আসে কী করে? এইবার ওরা হয়েছে রাজা মধুসূদনের বাহন। ওরা সবাই এইসময়ে নদীর জলে স্নান করে পরিষ্কার হবার কাজে ব্যস্ত।”


সর্দার-তোতার বউ রানি-তোতা খুব মিষ্টি দেখতে, আর তেমনি তার গলার সুর। আজকের এই খেলার সব নিয়মকানুন আমাদেরকে বুঝিয়ে বলছিল, কথায় আর গানে মিলিয়ে- মিশিয়ে। রানী-তোতা বলছিল,
“রাজা বলেছেন, আমরা এই মেলায় আসবো মজা আর আনন্দ করতে, জিততে বা হারতে নয়। সেজন্য যে যাতে ভালো নয় সে তাই করে দেখাবে। আমরা সব পাখিরা এবং নদীর কাছিমেরা দৌড়াবো। সেই দৌড়ে এতটুকুও লাফানো বা ওড়া চলবে না। হাতি আর হরিণ সাঁতার কেটে দেখাবে নদীতে।”

টুম্পা শুনে বলে,
“বেশ মজা হবে তো!"
লিকলিকে কঞ্চিবাঁশের মতো অরিন্দম তুখোড় সাঁতারু। মোটা দেবুকে দেখিয়ে নিরীহ গলায় বললে, 
“সেই দলে দেবু থাকলে বেশ হতো”। 
আমাদের সমবেত হাসির রোলকে থামবার ইশারা করে সর্দার-তোতা বলে, “হলুদ পাখির দল দাঁতালো হাতি এবং তার পুরো দলকে দেখতে পেয়ে গেছে। তারা দেখেছে, দাঁতালো হাতির পিঠে চড়ে রাজা মধুসূদন এইমাত্র জংগলের পদ্মদিঘি পার করে, এই মেলার মাঠে আসছেন।”

দু’মিনিট যেতে না যেতেই, উড়ন্ত হলুদ পাখিদের দেখা গেল মাঠের সীমানাতে। তারা প্রায় আমাদের মাথার সমান-সমান উঁচুতে আসতেই দেখা গেল মাঠের ঠিক পূর্বদিকে একটি বড়ো কালো বিন্দু। সামান্য পরেই দেখা গেল একটি দাঁতালের কিছুটা আভাস আর তার সাথে ভেসে এলো বাঁশির সুমধুর আওয়াজ। এইবার পরিষ্কার দেখা গেল পুরো হাতি পরিবারকে। সামনে দাঁতাল হাতি, তার পেছনে রানি হাতি, আর রানি হাতির দু'পাশে সার করে তাদের শাবকেরা। দাঁতালের পিঠে যে চড়ে আছে, তাকে এতদূর থেকে পরিষ্কার দেখা না গেলেও তার বাঁশির মিঠে সুর ভেসে আসছিল আর সবাই শিহরিত হয়ে উঠছিলাম।

রানি-তোতা একটু চড়ায় উঠে ধরলে, 
“ তুমি স্বাগত, তুমি স্বাগত/ হে রাজা এসো প্রিয়বান্ধব শ্রী মধুসূদন”।

আর সেই সুরে তাল মিলিয়ে জঙ্গলের সব প্রাণীরা একসাথে বলে উঠলো,
“এসো রাজা মধুসূদন, আজ সবাই দেখি তোমায় প্রাণভরে”। 

হাতি পরিবার মাঠের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে।সবাই তাঁকে দেখবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ছে। এই দেখে রাজা নিজেই দাঁড়ালেন দাঁতালের পিঠে। তাঁর পরনে সোনার জরির পাড়ের পীতবর্ণের রেশমি ধুতি, গায়ে হাল্কা সোনালি-হলুদ রঙের উড়নি, চুড়ো করে বাঁধা কালো কোঁকড়ানো চুলে গোঁজা আছে ময়ূরের পালক। এই রাজবেশ দেখতে-দেখতে তাঁর মুখপানে চেয়ে থমকে গেলাম, আমার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেল । মধুর মতো রঙের সেই মিষ্টি ভুবন-ভোলানো হাসিমাখা মুখ আর চোখে সেই মায়াবী দৃষ্টি, এ তো আমার মধুদাদা! সে আবার শ্রীমধুসূদন হয়ে এই জঙ্গলের রাজা হল কবে?

দাঁতাল হাতি রাজাকে নামাবার জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু উনি আমাদের দেখতে পেয়ে ঠিক আমাদের সামনেই হাতির শুঁড় বেয়ে নেমে পড়লেন। হনুমান বাহিনী আর ভালুক মামা সপরিবারে এগিয়ে এলেন, রাজাকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যেতে। রাজা, আমাদের দিকে চেয়ে ওদেরকে বললেন, 
“এবার আমি আমার নতুন বন্ধুদের সাথে বসব”।

আমরা যে বটগাছের নিচে বসেছিলাম, তার ঝুরিগুলোকে স্বেচ্ছাসেবীরা চটপট বেঁধে দিয়ে, ওঁর জন্যে একটা দোলনা বানিয়ে দিলেন। দোলনার দিকে যেতে-যেতে, আমার কাছে এসে বললেন, 
“বন্ধু শমীক, তোমার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও”। 

আমি তাহলে ঠিকই ধরেছি, জংগলের রাজাই আমার মধুদাদা। আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথে যখন আলাপ করিয়ে দিচ্ছি, দেখি ভালুক মামা, সর্দার-তোতা আর রানিতোতা,জংগলের আর সবাই, অবাক হয়ে আমায় দেখছে। আমি যে সে লোক নই, জঙ্গলের রাজা শ্রীমধুসূদনের বন্ধু। আলাপ পরিচয়ের পর মধুদাদা আমার কাছে এসে বললে, 
“বন্ধু, আমাকে যে যেমনভাবে চায়, আমি তার কাছে সেইভাবে আসি। সেই রাত্রে তুমি যখন বাড়ীর পথ হারিয়েছিলে, তোমার দরকার ছিল এক বন্ধুর। তাই আমি এসেছিলাম তোমার বন্ধু হয়ে, সাধারণ বেশে । আর এই জঙ্গলের প্রাণীরা আমাকে রাজা হিসেবে পেতে চায়, তাই আমি তাদের কাছে এই রাজবেশে এসেছি”।

 স্বেচ্ছাসেবীরা এইবারে মধুদাদাকে খেলাধুলো এবং আনন্দমেলার উদ্বোধন করতে অনুরোধ করলে।

মধুদাদা বললে, “ আমার মনে হচ্ছে আমরা এইবার সমবেত নৃত্য দিয়ে শুরু করি । একসাথে দুটো জিনিসেরই উদ্বোধন হয়ে যাবে।”
মাদের দিকে চেয়ে মধুদাদা বললে,
“নাচের সময় আমি বাঁশি বাজাবো । তোমাদের মধ্যে, কারা আমার সাথে সঙ্গত করতে চাও?”

নীতিশ বললে, 
“আমরা ক’জনা চেষ্টা করবো সঙ্গত করতে। কিন্তু এইখানে কি আর বাজনার সেইসব জিনিষগুলো পাওয়া যাবে?”
মধুদাদা বললে, “তোমাদের কী কী চাই, তা একবার আমায় বলে তো দ্যাখো? তারপর আমি দেখছি কিছু করা যায় কি না?”

নীতিশের এক বন্ধু বলে উঠলো, “ আমাদের চাই, ঢোলক, বড়ো ড্রাম, বঙ্গো, গীটার আর অ্যাকর্ডিয়ান” ।

আমার খুব রাগ হচ্ছিল ওদের কথা শুনে। কতো তো তোরা বাজাতে পারিস, সে আমাদের সব জানা আছে। এই জংগলের মধ্যে এইসব জিনিষ চেয়ে, মধুদাদাকে বিব্রত করবার কোনো মানে হয়? 
মধুদাদা হেসে বলে, 
“দেখ তো ওই গাছের কোনায়, কী কী সব রাখা আছে । মনে হচ্ছে, তোমরা যা চাইছিলে, তার সবগুলোই ওইখানে আছে। আমি একটু বাজাচ্ছি, তোমরা তাহলে সেই অনুযায়ী যন্ত্রগুলো বেঁধে নাও”।

মধুদাদা একটা সুর বাজাতেই, যারা বাজাবে, তারা তাদের যন্ত্রগুলোতে বেশ চটপট সুর বেঁধে ফেললো। মধুদাদা আর ওরা বাজানো শুরু করতেই ময়ূরের দল তাদের নাচ শুরু করলো। তাদের নাচ দেখে মনে হচ্ছিল যেন হুবহু ছৌ নাচ দেখছি। সেই নাচ দেখে জংগলের সব প্রাণীদের নিজ-নিজ আওয়াজে কী উল্লাস!

গাছের ডালে-ডালে লাফিয়ে-লাফিয়ে ওঠানামা করা কাঠবিড়ালির দল সেই নাচ দেখে আর থাকতে পারলো না। তারা দলে-দলে নেমে আসতেই মধুদাদার ইশারায় ময়ূরের দল থেকে একটু তফাতে থেকে বাজনার তালে-তালে মাটি থেকে উঁচুতে লাফিয়ে আর নেমে এক নতুন ধরনের নাচ দেখাতে শুরু করলে।

সেই দেখে হরিণের দলও এলো নাচতে, আর তারপর বাইসনের পুরো পরিবার। দেখতে-দেখতে মাঠে জমায়েত হয়ে থাকা সব প্রাণীরা নাচে অংশ নিলে। কিন্তু সবাই নিজ- নিজ দলে আর সুশৃঙ্খলভাবে। এমনকি যখন হাতির দলও নাচে অংশ নিলে তখন মাটি কেঁপে উঠছিল ভূমিকম্পের মতো কিন্তু কোনো দলের কিছু অসুবিধে হয়নি। এমনকি এই শৃঙ্খলায় আমরা যারা অনভ্যস্ত তাদেরও না। একটু পরেই সবাই নাচের তালে-তালে নিজেদের অঙ্গ দোলাতে-দোলাতে নিজ-নিজ আওয়াজে বলে উঠছিল,
“মধুসূদন, হে মধুসূদন”।

মধুদাদা এই নাচের দলে একদম কেন্দ্রে থেকে, একের পর এক সুর বাঁশিতে বাজিয়ে চলেছিল আর দারুণ সঙ্গত করছিল আমাদের স্কুলের বাজিয়ের দল।

আমরা নিজেরাও জানি না, কখন আমরাও বাইসন, হরিণ, হাতি, হনুমানদের দলে মিশে গেছি আর দু’হাত তুলে মধুদাদার বাঁশির তালে নেচে চলেছি।

এই সমবেত আনন্দে ডুবে গিয়ে আমাদের মনে জমে থাকা দুঃখ, বেদনা, স্কুলের নির্দয় আর বিরক্তিকর স্মৃতিগুলো কোথায় যেন ধুয়ে-মুছে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। আনন্দে শিহরিত হতে-হতে আমরা সবাই বাকিদের সাথে নাচের মাঝে-মাঝেই বলে উঠছিলাম
 “জয় মধুসূদন, হে মধুসূদন”।


হঠাৎ দূর থেকে ভেসে এলো আমাদের বাবা,মা, আর স্কুলের স্যারদের, ম্যামদের, আর সবাইকে ছাপিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যামের চিৎকার। আমাদের নাম ধরে তারা ডেকেই চলেছে। এত মানুষের চিৎকার শুনে জংগলের সব প্রাণীরা ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু মধু দাদা সবাইকে আশ্বস্ত করলে।আমাদের দিকে তিনি হাত তুলে বললেন, “তোমরা, তোমাদের অভিভাবকদের কাছে ফিরে যাও, আর বাকি সবাই, তোমরা এসো আমার কাছে”।

আমাদের স্কুলবাস যে ঢালু রাস্তায় নিজেকে কোনোমতে সামলে, এই মাঠের এককোণে এসে দাঁড়িয়ে এই আনন্দমেলা দেখছিল, সে এবার টালমাটাল চালে মধুদার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে, 
“ হে রাজা শ্রীমধুসূদন, তুমি আমায় রক্ষা কর।আমি যা করেছি, তা আমার বন্ধুদের আনন্দের জন্য। কিন্তু এখন আমাকে দেখতে পেলেই, এই ড্রাইভার আর মেকানিক, খুব নির্দয় ভাবে, আমাকে মারতে-মারতে, মেরেই ফেলবে”।

মধুদাদা তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, 
“তবে তুমিও এসো আমার সাথে। কেউ তোমার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না।”

এইকথা শেষ হতে না হতেই, এক লহমায়, আমরা ছাড়া সবাই কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল।

সেদিন, বা তার পরেও, আমাদের মা বাবা স্কুলের ম্যাম আর স্যারেরা আমাদেরকে অক্ষত ফিরে পেয়ে এতটাই আনন্দে ডুবে গেছিলেন যে কেউ ভুলেও জিজ্ঞেস করেননি এতটা সময় জংগলে আমরা কী করলাম? আমরাও কেউ কিচ্ছুটি বলিনি আর বললে বিশ্বাসই বা কে করতো? এমনকি পেট-আলগা টুম্পাও একটি কথা বলেনি।

নতুন-বাসটা ঝকঝকে সুন্দর হলে কি হবে, সে একদম বোবা। আমাদের পুরানো স্কুলবাসকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার দুঃখে আমরা সবাই বেশ কয়েকদিন চুপসে গেছিলাম। আমাদের মনঃকষ্ট আর দুঃখ দেখে, মধুদাদা একদিন তার হদিস আমাদের দিল।

এক রবিবারের ছুটির সকালে, আমরা ক'জন সেই জংগলের নদীর ধারে একটা ঝোপে ঢাকা জায়গাতে গিয়ে আমাদের সেই পুরানো বাস বন্ধুর খবর জানতে আর সে কেমন আছে দেখতে গিয়েছিলাম ।সেখানে সে তার নতুন বন্ধুদের নিয়ে খুব ব্যস্ত। নতুন বন্ধুরা মানে বাঁদরেরা, শেয়ালের বাচ্চারা, এমনকি বাঘমামার বাচ্চারা।এরা জংগলে লুকোচুরি খেলতে-খেলতে বাসের মধ্যে এসে এমন- এমন সব জায়গায় লুকিয়ে পড়ে যে বাকিদের তাদের খুঁজতে খুব নাকাল হতে হয়। এদের সবার এমনকি মাঝে-মধ্যে আমাদেরও লুকোচুরি খেলবার জন্য দারুণ সুন্দর একটা নতুন জায়গা হয়েছে।


(সমাপ্ত)


 অলঙ্করণ : সুস্মিতা কুণ্ডু

No comments:

Post a Comment