অনেকদিন পর বেড়াতে এসে খুব ভাল লাগছিল রাতুলের। স্কুলে এখন গরমের ছুটি চলছে। পরীক্ষার খাতাগুলো দেখার জন্য সে সঙ্গে করে এনেছে।
রাতুলের বয়স বেশি নয়। সবে এক বছর সে স্কুল সার্ভিস পাশ করে স্কুলে জয়েন করেছে। চন্দনপুরে আসার কোন প্ল্যান ছিল না। যাচ্ছিল বন্ধুর কাছে চন্দনগড়ে। ট্রেনে করে যেতে যেতে এই স্টেশন ওর ভাল লেগে যায়। ছোট্ট স্টেশন। কোথাও কোন ভিড় নেই। স্টেশন-চত্বরেই পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার গাছ। ফুলে ভর্তি হয়ে আছে। নিচটা সিমেন্ট দিয়ে গোল করে বাঁধানো। ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে স্টেশন-চত্বর। দু'একজন দেহাতি লোক চা খাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের পেছনে একটা পুকুর দেখা যাচ্ছে। শালুক ফুটে আছে তাতে। রাতুল আর পারল না, নেমে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে একজোড়া ঘুঘুপাখির ডাকে ওর মনটা আরও বেশি ভাল হয়ে উঠল।
স্টেশনের কাছে সস্তা একটা হোটেল ভাড়া নেয় রাতুল। এই গ্রাম্য পরিবেশ ওর ভাল লেগে যায়। বিকেলে প্রতিদিন কিছুক্ষণ স্টেশনে বসে থাকে। চা খায় ভাঁড়ে করে। ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ট্রেন দেখে। এই সুখ সে কখনও শহরে বসে পায়নি। স্টেশনমাস্টারের সঙ্গেও আলাপ হয়। সকালে রোদ থাকার জন্য ও বেরোয় না বিশেষ। খাতা দেখা আর পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সকাল আর দুপুরের খাবার কাছেই একটা হোটেল থেকে খেয়ে আসে। বিকেলে বেড়াতে বেরোয়। নানান রাস্তা নানান অলিগলি ঘুরে, স্টেশনে কিছুটা সময় কাটিয়ে সন্ধের সময় কালী মন্দিরের আরতি দেখে হোটেলে ফেরে ।
একদিন দুপুরে হোটেলে ভাত খেতে বসে রাতুল শুনল হোটেলের মধ্যে বেশ গুঞ্জন চলছে। রাতুল মন দিয়ে যা শুনল, এই অঞ্চলে নাকি এক গভীর বন আছে সেখানে একবার কেউ ঢুকলে আর বেরুতে পারে না। গতকাল একটি ছেলে সেই বনে ঢুকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। এমন ঘটনা আগেও হয়েছে, নতুন নয়। এটা এই জায়গার একটা অভিশাপ, বাইরের ছেলেদের টেনে আনে এই জঙ্গল তারপর তাকে গায়েব করে দেয়। বলা ভাল তাকে খেয়েই নেয়। রাতুল ভাবল পরের দিন বিকেলে বনটা দেখে আসবে। বনটা সে চেনে। আসবার যাওয়ার পথে অনেকবার দেখেছে।
পরের দিন বিকেলে বেড়াতে যাবার সময় বনের দিকে যায়। এই জায়গা অনেক বেশি আরণ্যক। বনের একদম সামনের সরু পিচের রাস্তায় এসে পড়ে রাতুল। শালগাছের জঙ্গল। এক্ষুণি মনে হয় বৃষ্টি নামবে। বেশ মেঘ করেছে। রাতুল ভেতরে যেতে চায়, সাইকেল করে একটা ছেলে যেতে যেতে চিৎকার করে ওঠে, "যেও না ওখানে। ওখানে যে যায় সে আর ফেরে না।"
ছেলেটা মিলিয়ে যায় একসময়। রাতুল জঙ্গলের মধ্যে ঢুকল। অদ্ভুত রকমের ভালোলাগায় ওর মন ভরে গেল। নানান রকমের পাখি ডাকছে। নারকেলগাছের পাতাগুলো ঝিরিঝিরি হাওয়ায় দুলছে। রাতুলের মনে হল এইখানেই একটা গাছের নিচে শুয়ে পড়ে। সামনেই অদ্ভুত কিছু ফুল ফুটে আছে যেগুলো আগে কখনও দেখেনি ও। কেমন একটা ঘুম ঘুম লাগছে। একটু চোখ বুজে নিলে আর কীই বা হবে। সে তো আর বেশি ভেতরে ঢোকেনি। এখনও সামনে পিচের সরু রাস্তা দেখা যাচ্ছে। ওই দিক দিয়েই ও এসেছে আবার বেরিয়েও যাবে।
যখন ঘুম ভাঙল রাতুলের তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এত অন্ধকার কী করে হল? কতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে? মোবাইলে দেখাচ্ছে রাত ৯টা। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার! এরকম ভাবে খোলা আকাশের নিচে তো সে কখনও ঘুমায় না। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। টর্চ জ্বেলে ও এগুতে গেল। সামনেই তো ছিল বাইরে যাওয়ার রাস্তা। এখন সেটা দেখাই যাচ্ছে না। আশ্চর্যজনকভাবে জঙ্গলের অনেক ভেতরে চলে এসেছে ও। চার্জ নেই, মোবাইলের আলোও নিভু নিভু। ক্লান্তিতে, হতাশায়, ভয়ে আর নিজের ওপর রাগে রাতুল মাটিতে বসে পড়ে। নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে। এইভাবে থাকতে হলে তো সে মারাই যাবে। জঙ্গল সত্যি ভুতুড়ে। নইলে এত ভেতরে সে কী করে এল আর ঘুমিয়েই বা পড়ল কীভাবে? গায়ের ওপর দিয়ে ঠান্ডামতো কিছু একটা চলে গেল। শিউরে উঠল রাতুল। সাপ ছাড়া আর কিছু নয়। ভয়ে ভাবনায় যখন তার হার্টফেল করার অবস্থা তখন কাঁধে কারো হাত পড়তে চেঁচিয়ে উঠল রাতুল। তারার অল্প আলোয় দেখল অল্পবয়সী একটা ছেলে। ছেলেটা বলল, "তোমায় আমি বারণ করেছিলাম জঙ্গলে ঢুকতে। কেন ঢুকলে?"
রাতুল বুঝতে পারল সাইকেল করে যেতে যেতে এই ছেলেটিই তাকে জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করেছিল। এখন এখানে সে এল কীভাবে! রাতুলের হাতটা ধরে ছেলেটা টান মারে তাড়াতাড়ি। অনেক অন্ধকার জঙ্গুলে পথ দিয়ে রাতুলকে সে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। গায়ের কাছ দিয়ে একঝাঁক বাদুড় উড়ে যায় ডানা ঝটপটিয়ে। পাশে একটা খালের জলে কারা যেন ডুবছে আর উঠছে। রাতুল দাঁড়িয়ে দেখতে চায় কিন্তু সঙ্গী তাকে বাধা দেয় হাত ধরে টানতে থাকে। বলে, "সময় একদম নেই। তাড়াতাড়ি করো। ওই শোনো পেছনে ছুটে আসছে অশরীরী আত্মারা। ওরা এই জঙ্গলে প্রাণ হারিয়েছে। ওরা চায় না কেউ এখানে এসে প্রাণ নিয়ে ফিরে যাক।"
ছেলেটা মিলিয়ে যায় একসময়। রাতুল জঙ্গলের মধ্যে ঢুকল। অদ্ভুত রকমের ভালোলাগায় ওর মন ভরে গেল। নানান রকমের পাখি ডাকছে। নারকেলগাছের পাতাগুলো ঝিরিঝিরি হাওয়ায় দুলছে। রাতুলের মনে হল এইখানেই একটা গাছের নিচে শুয়ে পড়ে। সামনেই অদ্ভুত কিছু ফুল ফুটে আছে যেগুলো আগে কখনও দেখেনি ও। কেমন একটা ঘুম ঘুম লাগছে। একটু চোখ বুজে নিলে আর কীই বা হবে। সে তো আর বেশি ভেতরে ঢোকেনি। এখনও সামনে পিচের সরু রাস্তা দেখা যাচ্ছে। ওই দিক দিয়েই ও এসেছে আবার বেরিয়েও যাবে।
যখন ঘুম ভাঙল রাতুলের তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এত অন্ধকার কী করে হল? কতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে? মোবাইলে দেখাচ্ছে রাত ৯টা। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার! এরকম ভাবে খোলা আকাশের নিচে তো সে কখনও ঘুমায় না। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। টর্চ জ্বেলে ও এগুতে গেল। সামনেই তো ছিল বাইরে যাওয়ার রাস্তা। এখন সেটা দেখাই যাচ্ছে না। আশ্চর্যজনকভাবে জঙ্গলের অনেক ভেতরে চলে এসেছে ও। চার্জ নেই, মোবাইলের আলোও নিভু নিভু। ক্লান্তিতে, হতাশায়, ভয়ে আর নিজের ওপর রাগে রাতুল মাটিতে বসে পড়ে। নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে। এইভাবে থাকতে হলে তো সে মারাই যাবে। জঙ্গল সত্যি ভুতুড়ে। নইলে এত ভেতরে সে কী করে এল আর ঘুমিয়েই বা পড়ল কীভাবে? গায়ের ওপর দিয়ে ঠান্ডামতো কিছু একটা চলে গেল। শিউরে উঠল রাতুল। সাপ ছাড়া আর কিছু নয়। ভয়ে ভাবনায় যখন তার হার্টফেল করার অবস্থা তখন কাঁধে কারো হাত পড়তে চেঁচিয়ে উঠল রাতুল। তারার অল্প আলোয় দেখল অল্পবয়সী একটা ছেলে। ছেলেটা বলল, "তোমায় আমি বারণ করেছিলাম জঙ্গলে ঢুকতে। কেন ঢুকলে?"
রাতুল বুঝতে পারল সাইকেল করে যেতে যেতে এই ছেলেটিই তাকে জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করেছিল। এখন এখানে সে এল কীভাবে! রাতুলের হাতটা ধরে ছেলেটা টান মারে তাড়াতাড়ি। অনেক অন্ধকার জঙ্গুলে পথ দিয়ে রাতুলকে সে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। গায়ের কাছ দিয়ে একঝাঁক বাদুড় উড়ে যায় ডানা ঝটপটিয়ে। পাশে একটা খালের জলে কারা যেন ডুবছে আর উঠছে। রাতুল দাঁড়িয়ে দেখতে চায় কিন্তু সঙ্গী তাকে বাধা দেয় হাত ধরে টানতে থাকে। বলে, "সময় একদম নেই। তাড়াতাড়ি করো। ওই শোনো পেছনে ছুটে আসছে অশরীরী আত্মারা। ওরা এই জঙ্গলে প্রাণ হারিয়েছে। ওরা চায় না কেউ এখানে এসে প্রাণ নিয়ে ফিরে যাক।"
রাতুল পিছু ফিরে দেখতে গেল সঙ্গী তাকে বাধা দিল। শুধু পেছন থেকে নানারকম চিৎকার শুনতে পেল।
অবশেষে একসময় রাতুলরা এসে পৌঁছয় জঙ্গলের বাইরে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। রাতুল তার ত্রাতাকে জড়িয়ে ধরে। ছেলেটি রাতুলকে ফিরে যেতে বলে। রাতুল জিজ্ঞাসা করে, "তুমি কীভাবে আমায় উদ্ধার করলে? এই জঙ্গলের ব্যাপারে কতটা জানো?"
"আমিও ঠিক জানি না এখানে কী আছে। শুধু এইটুকুই জানি যে এই জঙ্গলে কিছু নেগেটিভ এনার্জি আছে। এইজন্য এখানে কেউ একবার ঢুকলে আর বেরুতে পারে না। এখন থেকে এখানে আর কাউকে মরতে দেব না আমি। এই জঙ্গলের এমন টান যে উপেক্ষা করা যায় না। তবে যারা মরে তারা বাইরের লোক। আমিও বাইরে থেকে এসেছিলাম তোমার মতো। ট্রেনে করে যেতে যেতে জায়গাটা দেখে হঠাৎ ভাল লেগে গেল। জঙ্গলে ঢুকে আর বেরুতে পারিনি।" বলতে বলতে ছেলেটি বাতাসে মিলিয়ে যায়।
প্রচণ্ড উৎকন্ঠা নিয়ে রাতুল হোটেলে ফিরে আসে। বড় ঘড়িতে এখন রাত ন'টা। ওর সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
রাতুল পরের দিন সকালে বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরে প্রচণ্ড জ্বরে পড়ে রাতুল। সেই নেগেটিভ এনার্জি বা ভুতুড়ে শক্তির কবলে পড়ে রাতুলকে অনেকদিন ভুগতে হয়েছিল। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার রাতুলের এই একা একা বেড়ানোর অভ্যাস ছাড়তে হয়েছিল।
অবশেষে একসময় রাতুলরা এসে পৌঁছয় জঙ্গলের বাইরে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। রাতুল তার ত্রাতাকে জড়িয়ে ধরে। ছেলেটি রাতুলকে ফিরে যেতে বলে। রাতুল জিজ্ঞাসা করে, "তুমি কীভাবে আমায় উদ্ধার করলে? এই জঙ্গলের ব্যাপারে কতটা জানো?"
"আমিও ঠিক জানি না এখানে কী আছে। শুধু এইটুকুই জানি যে এই জঙ্গলে কিছু নেগেটিভ এনার্জি আছে। এইজন্য এখানে কেউ একবার ঢুকলে আর বেরুতে পারে না। এখন থেকে এখানে আর কাউকে মরতে দেব না আমি। এই জঙ্গলের এমন টান যে উপেক্ষা করা যায় না। তবে যারা মরে তারা বাইরের লোক। আমিও বাইরে থেকে এসেছিলাম তোমার মতো। ট্রেনে করে যেতে যেতে জায়গাটা দেখে হঠাৎ ভাল লেগে গেল। জঙ্গলে ঢুকে আর বেরুতে পারিনি।" বলতে বলতে ছেলেটি বাতাসে মিলিয়ে যায়।
প্রচণ্ড উৎকন্ঠা নিয়ে রাতুল হোটেলে ফিরে আসে। বড় ঘড়িতে এখন রাত ন'টা। ওর সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
রাতুল পরের দিন সকালে বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরে প্রচণ্ড জ্বরে পড়ে রাতুল। সেই নেগেটিভ এনার্জি বা ভুতুড়ে শক্তির কবলে পড়ে রাতুলকে অনেকদিন ভুগতে হয়েছিল। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার রাতুলের এই একা একা বেড়ানোর অভ্যাস ছাড়তে হয়েছিল।
(সমাপ্ত)
অলঙ্করণ : সুস্মিতা কুণ্ডু
অলঙ্করণ : সুস্মিতা কুণ্ডু
No comments:
Post a Comment