বেশ কিছুকাল আগেও পাড়ায় পাড়ায় ছোট গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরির দেখা মিলত। কিন্তু অর্ন্তজালের দাক্ষিণ্যে পাঠকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ছোট ছোট লাইব্রেরিগুলো বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছে পাড়ার গলি ছেড়ে। এমনকি বিশ্বের তাবড় তাবড় লাইব্রেরিতেও পাঠকের সংখ্যা দিন দিন পড়তির দিকে।
বিশ্বের বেশ কিছু সুবিশাল লাইব্রেরির অন্যতম হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মারিল্যান্ডে অবস্থিত জর্জ পিবডি লাইব্রেরি। ছাপা বইয়ের পড়তি পাঠকের দিনে এই লাইব্রেরির আকর্ষণ খুব একটা কমেনি। বরং এই লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে মারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আগত পর্যটকদের অবশ্য গন্তব্যস্থল। এই লাইব্রেরিকে পুস্তকপ্রেমী ও গবেষকরা ভালবেসে বলেন “ক্যাথিড্রাল অফ বুকস” – বই মন্দির। অতি শান্ত পরিবেশের এই পুস্তকাগারে গেলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠবে।মনে হবে এসে পড়েছি কোনও উপাসনাস্থলে।
১৮৫৭ সালে মার্কিন মানবদরদী ধনকুবের জর্জ পিবডির তিন লক্ষ মার্কিন ডলার দানের অর্থে পিবডি ইন্সটিটিউট তৈরির সূচনা হয়। ঠিক ছিল ১৮৬০ সালে চালু হয়ে যাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার লাইব্রেরি । কিন্তু গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত উদ্যোগ। ঢিমে তালে চলতে থাকে কাজ। ১৮৬৬ সালে চালু হয় পিবডি ইন্সটিটিউটের একটি অংশ। ১৮৬৯ সালে জর্জ পিবডির মৃত্যুর পর তাঁর কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন পিবডির বন্ধু তথা অনুগামী বে স্টাটের।
১৮৭৮ সালে চালু হয় লাইব্রেরি। সবার জন্য উন্মুক্ত এই লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করার জন্য কোন অর্থ দিতে হত না। প্রথম দিকে পিবডি ইন্সটিটিউটের একটা অংশ হলেও পরে এটি সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা নেয়। সে সময়কার স্থানীয় এক স্থপতি এডমণ্ড জি লিন্ড পাঁচতলা লাইব্রেরিটির পরিকল্পনা এমনভাবে করেছিলেন যে,পাঁচতলা লাইব্রেরির প্রশস্ত রেলিং দেওয়া বারান্দায় বসে কোন কৃত্রিম আলো ছাড়াই নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারতেন পাঠক। ৬১ ফুট উঁচু লাইব্রেরির মাঝখানের ছাদটা তৈরি হয়েছিল পুরু কাঁচ দিয়ে। সেই কাঁচ দিয়ে দিনের আলো এসে পড়ত বারান্দা সহ লাইব্রেরির ঠিক মাঝখানের বিশাল ফাঁকা অংশে। পর্তুগীজ ‘বারোক’ , ফরাসী ‘রোকো’ ও রোমান ‘গ্রেকো’ স্থাপত্যকলার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এই লাইব্রেরির নক্সা বানিয়েছিলেন স্থপতি লিন্ড। সোনার কারুকার্য করা লম্বা থাম। সাদা কালো পাথরের মেঝে, বিশেষ নক্সার ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি জালি ঘেরা প্রশস্ত ঝুল বারান্দা। আঠারো থেকে বিংশ শতকের প্রথমদিকের তিন লক্ষেরও বেশি চামড়ায় বাঁধানো দুষ্প্রাপ্য বই আছে এই লাইব্রেরিতে। বিশ্বের গবেষকদের কাছে এই লাইব্রেরি এক অমূল্য সম্পদ।
দূরদর্শী জর্জ পিবডি শুধু প্রাসাদসদৃশ একটি লাইব্রেরির বাড়ি তৈরি করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, তিনি তাঁর সংগ্রহের অসংখ্য বইও দিয়ে গিয়েছিলেন এই লাইব্রেরিতে। এই লাইব্রেরিকে জনপ্রিয় করতে একের পর এক সাহিত্যের আলোচনা সভা ও শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন পিবডির উত্তরসূরিরা। এমন কোনও বিষয় নেই যা সম্পর্কে বই নেই এই লাইব্রেরিতে। জন্মলগ্নে এই লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানদের সেই সময়কার শ্রেষ্ঠ মার্কিন লাইব্রেরিগুলোতে পাঠানো হয়েছিল তাদের সংগ্রহ ও পরিচালন পদ্ধতি দেখার জন্য। এই লাইব্রেরি শুধুমাত্র লাইব্রেরির জন্মের সমসাময়িক সময় থেকেই বই সংগ্রহ করেনি, এখানে রক্ষিত আছে অতি প্রাচীন অনেক সংগ্রহ। যেমন এই লাইব্রেরিতে আছে চোদ্দ শতকে গরুর চামড়ার ওপর হাতে লেখা সঙ্গীত বিষয়ক বই।
২০০২ সালে এক লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ করে আমূল সংস্কার করা হয়েছে এই লাইব্রেরির। আর্থিক সচ্ছলতা বাড়াতে বর্তমানে এই লাইব্রেরির নিচের পঠনপাঠনের জায়গাটি লাইব্রেরির নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। অনেকে পুস্তকপ্রেমী তাদের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে এই লাইব্রেরিতে আয়োজন করেন তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান।
এই লাইব্রেরির জন্মলগ্ন থেকে শুধু এখানে বসেই বই পড়া যায় । তাই খোয়া যায়নি একটি বইও।
তথ্যসূত্র :
george-peabody-library-wedding-venue
peabodyevents.library.jhu.edu/history
wikipedia.org
অসাধারণ তথ্য 😊
ReplyDeleteঅসাধারণ তথ্য 😊
ReplyDelete