গল্পের ঝুলি : তস্করশিল্পী : দিব্যেন্দু গড়াই





বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তেই ছ্যাঁক করে উঠল। জ্বর গায়ে আজ কাজে বেরিয়েছে নন্দ। বামুনপাড়ার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা সোজা পুবের মাঠের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তা দিয়ে পা টিপে টিপে হাঁটছিল ও। একপশলা বৃষ্টিতে পথময় কাদা। একটু অসাবধান হয়েছ কি, চিৎপটাং। আর এই পঞ্চান্ন বছর বয়সে পা হড়কে পড়লে কোমরের হাড় যে মোটেই আস্ত থাকবে না সেকথা নন্দ বিলক্ষণ জানে। গতবছর পুকুর ঘাটে পা পিছলে সাধনখুড়ো সেই যে শিরদাঁড়া ভেঙে শয্যাশায়ী হল, এখনও একই অবস্থা। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ও সাধনখুড়োর মত আড়াইমণি নয়। রোগাপাতলা চেহারা। সেজন্য বয়সও অন্যদের চেয়ে কম বলেই মনে হয়। আর বয়স হয়েছে বলে তো আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাঙ তুলে মৌজ করে চুরুট খাওয়ার সাধ মনে হয় না ওর কোনওদিনই পূরণ হবে। এক বিঘত লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে ফুসফুসে জোলো হাওয়া ভরে তাড়াতাড়ি পা চালাল নন্দ। অনেকটা যেতে হবে।


*****


বাপ নাম রেখেছিল পটাশ। তুবড়ি, রঙমশাল, হাউইবাজির কারিগর ছিল পটাশের বাপ বকুল। বাজির আসল মশলা গান-পাউডার তৈরির সময় সঠিক অনুপাতে পটাশ মানে পটাশিয়াম নাইট্রেট, কাঠকয়লা আর গন্ধক মেশানোতে সিদ্ধিলাভ করেছিল বকুল। শেষের দিকে তো চোখ বন্ধ করে ৭৫-১৫-১০ ভাগের অনুপাত মিশিয়ে মশলা তৈরী করে দিত। একচুলও এদিক-ওদিক হত না। তো সেই পটাশপ্রিয় বকুল তার একমাত্র ছেলের নাম পটাশ রাখবে না তো রাখবেটা কী? নাম পটাশ হওয়া সত্ত্বেও পটাশ কিন্তু বাপের মান রাখতে পারল না। পটাশ, কাঠকয়লা আর গন্ধক মেশানোটা শিখতে পারলেও বাহারি রঙ ঠিকমত আনতে পারত না পটাশ। ও দেখত বাপটা কী সুন্দর সাদা, লাল, কমলা, হলুদ, নীল, সবুজ রঙের ফুলকি ছোটাত তুবড়ি-রঙমশাল থেকে। হাউইগুলো আকাশে গিয়ে ফাটার পর রঙবেরঙের ফুল ফোটাত। বিভিন্ন রঙের জন্য বিভিন্ন জিনিস। সাদার জন্য অ্যালুমিনিয়াম, লালের জন্য লোহাচুর, নীলের জন্য তামা... আরও কত কী! ওগুলো ঠিক করে মেশাতে পারত না পটাশ। তাই শেষমেষ বাপের দ্বিতীয় পেশাটাকেই বেছে নিল ও। ....চুরি।


নান্না, নাক কুঁচকানোর মত কিছু নেই। এ জিনিস হেলাফেলার মত মোট্টেও নয়। মামুলি চোরদের মত ফাঁকা ঘর বা দোকান থেকে মাল তুলে সটকে পড়া বা অসতর্ক মানুষজনের কাছ থেকে জিনিস ছিনিয়ে দুদ্দাড় করে দৌড়ে পালানোর মত ছ্যা-ছ্যা কম্ম পটাশ কক্ষনো ভাবতেই পারে না। তার চেয়ে কাকতাড়ুয়া সেজে পাখিদের ভয় দেখানো ঢের সম্মানের। গেরস্তবাড়িতে ঘরভর্তি লোকজনের মধ্যে থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করার মধ্যে যে বাহাদুরি আছে তা ঐসব ছিঁচকে চুরির মধ্যে নেই। শুধু চুরি করাই নয়, চুরি করা সামগ্রী দু’দিন পরে লোকভর্তি হাটের মধ্যে গেরস্তকে ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক উত্তেজনা অনুভব করে পটাশ। জিতে যাওয়ার আনন্দ। অবশ্য চোর বিজয়ীর মত সম্মানও পায়। চুরির বস্তুর মধ্যে থেকে দামী কোন জিনিস উপহার হিসেবে হস্তগত হয় চোরের। এ কি কম আনন্দের? এই গোটা আমোদগঞ্জ ও আশেপাশের একুশটা গ্রামের মধ্যে এমন তস্করশিল্পীর এখন সত্যিই বড় অভাব। একজন মাত্র ওস্তাদই কাজের মধ্যে আছে এ লাইনে।


আজ রাতে সেই গুরুর কাছে হাতে-কলমে পরীক্ষা। কম খাটতে হয়নি এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে। শরীরে একফোঁটা অতিরিক্ত চর্বি থাকলেই বাতিল। বারো ফুট উঁচু পাঁচিল ডিঙানো থেকে শুরু করে নিমেষের মধ্যে জানালার শিক খুলে তার ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়া, পনেরোফুট লংজাম্প কিংবা পঞ্চাশ কেজির মাল নিয়ে ঘন্টায় কুড়ি মাইল স্পীডে দৌড়ানো... শরীরচর্চায় তুখোড় হতে হয়েছে পটাশকে। সাথে তাৎক্ষণিক বুদ্ধিরও পরিচয় দিতে হয় বৈকি। গেরস্তের বাড়ি ঢোকার কম সে কম দশ রকম উপায় ভেবে রাখতে হয়। একটা নাহলে আরেকটা। বিফল হওয়ার কোনও রাস্তা নেই। একবারের জন্য ব্যর্থ হয়েছ কি, ডাহা ফেল। তুমি আর ‘তস্করশিল্পী’ তকমা পাবে না। এত হ্যাপা বলেই না এ লাইনে কেউ আর আসতে চায় না!


দীর্ঘদিন চেষ্টা-চরিত্র করে ‘তস্করশিল্পী সংস্থা’র কাছে আবেদন-নিবেদন করে তবে সুযোগ পেয়েছে পটাশ। সংস্থা থেকে বেছে দিয়েছে মহালয়ার আগের রাত। এই রাত পোহালেই মহালয়া। পিতৃপক্ষের অন্তিম দিন। এদিন শেষ হলেই দেবীপক্ষের শুরু। পূর্বপুরুষদের আত্মার সমাবেশ ঘটে এই দিনে। ভোর হতে না হতেই একবুক জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ, প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি শুরু হয়ে যায়। রাতটা অনেকেই না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। কারণ ভোরের আলো ফোটার আগেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠস্বর জেগে উঠবে রেডিওতে। 


“আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা...”


পটাশকে ছোটবেলায় ওর বাবা ঘুম থেকে তুলে দিত মহালয়া শোনার জন্য। রেডিও ছিল না ওদের, তাতে কী? পাশের বাড়ির রেডিওতে মহালয়া শুনতে শুনতে পটাশ বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ত আবার। আজ মহালয়ার আগের রাতে সেইসব পুরোনো স্মৃতি ফিরে আসছিল। থম মেরে মিত্তিরদের দুর্গাদালানের বাইরে শিরীষ গাছের নীচে অন্ধকারে অপেক্ষা করছিল পটাশ। হঠাৎ কাঁধে টোকা পেয়ে ঘুরে দেখে গুরুদেব হাজির। অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়ার পরও গুরুকে আসতে দেখেনি ও। একেই বলে জাতশিল্পী। সেলাম জানাল মনে মনে। আগে থাকতে সব প্ল্যান করা ছিল। তাই কেউ কোনও কথা না বলে নিঃশব্দে ঘোষবাড়ির দিকে হাঁটা লাগাল। দুর্গাদালানের ডানপাশ দিয়ে সোজা সিকিমাইল গেলেই চিন্তাহরি ঘোষের বাড়ি। সুদের কারবারী চিন্তাহরি ঘোষ লোক খারাপ নয়। তবে কিপ্টেমিতে ওর ধারেকাছে কেউ আসবে না। সারাদিনে দশটাকার বেশী খরচ হয়ে গেলে প্রচন্ড মুষড়ে পড়ে। বংশে সন্তান হওয়ার সুখবর কাউকে বলেনি, পাছে কেউ মিষ্টিমুখ করাতে বলে। তো সেই সুদখোরের বাড়ি চুরি করে তস্করবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করতে হবে পটাশকে। সুবিধে একটাই, মাইনে দিতে হবে বলে পাহারাদার বা চাকরবাকর তেমন নেই ঘোষবাড়িতে। সিন্দুকের ঘরেই রাতে শোয় চিন্তাহরি ঘোষ, পাহারা দেবে বলে।


*****


এক ডজন দুধেল গাইয়ের জন্য গোয়ালঘরটা বেশ শক্তপোক্ত ভাবেই তৈরি করিয়েছে চিন্তাহরি ঘোষ। সেই গোয়ালঘরের ছাদের একটিমাত্র টালি সরিয়ে তার ফাঁক দিয়ে সুড়ুৎ করে গলে নিচে পড়ল পটাশ। গরুদের জাবনার গামলায় রাখা খড়-বিচালির গাদায় পড়াতে অওয়াজ হয়নি এতটুকু। কেবল পাশের লালগাইটা বসে বসেই লেজটা বাঁদিক থেকে ডানদিকে করল। বাড়িতে ঢুকে পড়া গেছে। মানুষ কেন, পশুতেও টের পায়নি। মানে, প্রথম পরীক্ষা পাশ। দ্রুতপায়ে লোহার তারজালি দিয়ে ঢাকা লম্বা উঠোন পেরিয়ে সিন্দুকের ঘরের সামনে পৌঁছায় পটাশ।


মধুমেহ রোগের কারণে প্রতি রাত্রে দু’বার ঘুম ভাঙে চিন্তাহরি বাবুর। একদম সঠিক সময়ে পৌঁছেছে পটাশ। ও জানালার বাইরে অন্ধকারের মধ্যে মিশে দাঁড়িয়েছিল। খুট করে ছিটকিনি খোলার আওয়াজ পেয়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দিল। তারপর অপেক্ষা। চিন্তাহরি বাবু লম্বা বারান্দার অন্যপ্রান্তে বাথরুমের দিকে যেতেই সিন্দুকঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল পটাশ। পেছন পেছন ওর গুরুদেব। ঠিক তিন মিনিট কুড়ি সেকেন্ড সময়। মাসখানেক আগেও বাথরুম করে ঘরে ফিরতে চিন্তাহরির ২মিনিটের বেশি লাগত না। ইদানীং প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা বাড়ার জন্য পটাশের কপালে আরও দেড় মিনিট অতিরিক্ত সময় জুটেছে। নিপুণভাবে সিন্দুকের চাবির খাঁজে ছোট্ট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যখন সিন্দুক খুলে ফেলল তখন মোটে দেড়মিনিট পেরিয়েছে। স্তূপীকৃত জমির কাগজ, টাকার বান্ডিল, স্বর্ণালঙ্কার সরিয়ে পেছনদিকে রাখা একটি বার্মাকাঠের বাক্স হাতে তুলে নেয় পটাশ। এক মুহূর্তের জন্য পেছন ফিরে দেখে নেয় গুরুদেবের সম্মতিসূচক মাথা নাড়া। ঘরে ঢোকার পর ঠিক তিন মিনিটের মাথায় ঘরের দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে পড়ে দুজন। একজনের কোমরের সাথে গামছা দিয়ে কাঠের, বাক্সটি বাঁধা। তারপরে আর দু'মিনিট সময় লাগে ওদের, ঘোষবাড়ি থেকে বের হতে।


*****


আমোদগঞ্জে মহালয়ার দিন সন্ধেবেলা মিত্তিরদের দুর্গাদালানে প্রতিবছর ভালোই জনসমাগম হয়। আজও লোকজনের ভিড় উপচে পড়েছে। পুজোর নির্ঘন্ট ঘোষণা করা হয় এদিন। মিত্তির বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠ হরেন্দ্রনাথ মিত্র, পুরোহিত নিতাই চক্কোত্তি, থানার বড়বাবু বামাচরণ শর্মা, হেলথ সেন্টারের ডাক্তারবাবু অন্বয় সাঁতরা, বিশিষ্ট পন্ডিত দুর্গাগতি সান্যাল... কে নেই সেখানে?

হরেন্দ্রনাথ মিত্র উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন।

"প্রায় দেড়শ বছর হতে চলল এই মিত্তিরবাড়ির পুজো। রাজা সুরথ বসন্ত ঋতুর শুক্লপক্ষে সর্বপ্রথম দেবীদুর্গার পুজো শুরু করেন। এই পুজোও তাই বসন্তকালেই হত। তখন ঘোটকমুখী সিংহের ওপর আসীন অষ্টধাতুর তৈরী দেবীমূর্তি পূজিত হতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা দেবীকে রক্ষা করতে পারিনি। দশ বছর আগে সেই মূর্তি খোয়া যায়। তারপর থেকেই অামরা শরৎকালেই মা দুর্গার পুজোর আয়োজন করে থাকি।

মা দুর্গার নামের অর্থ হল দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। কারণ, দ অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, গ অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। দেবী নিজেই সমস্ত অমঙ্গলের বিনাশ ঘটিয়ে আজ এই পুণ্যতিথিতে আমাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন।


আজ্ঞে হ্যাঁ। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে সেই অষ্টধাতুর মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। আর যে ব্যক্তি উদ্ধার করেছে তাঁকে সকলের তরফ থেকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। পটাশ, তুমি এখানে এসো। নিজের হাতে উদ্ধার হওয়া মূর্তি তুলে ধরো। সবাই দেখুক।’


আনন্দে, বিস্ময়ে হতবাক জনগণের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পটাশ। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা বার্মাকাঠের বাক্সটি। সকলের উল্লাসধ্বনি আর করতালির মধ্যে বাক্সের ডালা খুলে বের করে আনল দেবীমূর্তিটি। এখানে দেবী দুর্গা দশহাতে অস্ত্রসজ্জিতা হয়ে ঘোটকমুখী সিংহের ওপর দন্ডায়মান। লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ, এমনকি মহিষাসুরও অনুপস্থিত এই মূর্তিতে। অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তিটি ভারি সুন্দর। অন্যান্য অষ্টধাতুর মূর্তির মত ধাতব রঙের নয় এটি। বরং বেশ রঙীন। শাড়ি-গয়না-অস্ত্র-সিংহ সব আলাদা আলাদা রঙের। নীল-লাল-কমলা-হলুদ পড়ে যায় পটাশের। তন্ময় হয়ে দেখতে থাকে দুহাতের মধ্যে থাকা দেবীমূর্তিকে। আস্তে আস্তে মাথার উপর তুলে ধরে মূর্তি। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তারপরেই উল্লাসধ্বনিতে ফেটে পড়ে জনতা। দেবী দুর্গার সাথে নিজের নামে জয়োল্লাস শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলে পটাশ।


ভিড়ের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল দুজন। একজন বেশ বিমর্ষ মুখে। চিন্তাহরি ঘোষ। শোরগোলের মধ্যে ধীরে ধীরে সরে পড়ে সে। আরেকজন তখন মুখে চুরুট নিয়ে পটাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এই ছেলেটাই আমার যোগ্য উত্তরসূরি হবে। তস্করশিল্পী নন্দকুমারের পর তস্করশিল্পী পটাশ।

(সমাপ্ত)


অলঙ্করণ : দিতিপ্রিয়া গড়াই


4 comments:

  1. বাহ্ শেষটা পুরো জমে গেল। খুব সুন্দর গল্প আর খুব সুন্দর ছবি 😊

    ReplyDelete
  2. Baah fatafati 👌👌. End ta unexpected chilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. গল্পের শেষটায় চমক টা দিতে চেয়েছিলাম।
      পছন্দ হয়েছে জেনে খুশী হলাম খুব।

      Delete