ছোট্ট বন্ধুরা কেমন আছো? মন কি খুব পুজো পুজো করছে? পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল হওয়ার প্রস্তুতি দেখে স্কুলে বা বাড়িতে মন টিকছে না নিশ্চয়ই? পুজোর কেনাকাটাও নিশ্চয়ই অনেকটা হয়ে গেছে? ভাবছো এবার কবে আসবে পঞ্চমী-ষষ্ঠী আর টুক করে মা-বাবার হাত ধরে বেরিয়ে পড়বে ঠাকুর দেখতে বা শহরের কোলাহল, গ্রামের চেনা গন্ডির বাইরে বেরিয়ে পাড়ি দেবে অদূর বা সুদূর কোনো পাহাড়ে বা সমুদ্রে?
জানো, যাঁর অর্চনাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব, যাঁর আশীর্বাদে পরিবারের কল্যাণ কামনা করে আমরা শান্তিতে থাকি, যিনি চিরন্তন অশুভশক্তিকে বিনাশ করার প্রতীক, যাঁকে সারা ভারতবর্ষ দেবী হিসাবে বরণ করেন তিনি হয়তো আমাদের কাছে কোনো দেবীর থেকেও বেশি আপন। আমরা বাঙালিরা যেন তাঁকে ঘরের মেয়ে রূপে দেখি। নিজের ঘরের মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে ফিরলে যে আদর আপ্যায়ন বা ভালোবাসার উষ্ণতা ফিরে পায়, আমরা আমাদের মা দুর্গাকে সেই ভালোবাসায় যেন বাঁধতে চাই প্রতি বছর। প্রবাসী মেয়ের বাড়িতে আসার সময় হওয়া হইহুল্লোড়ের মতোই হয়তো।
চিরাচরিত ঠাকুর-ভক্তের সম্পর্ক থেকে যেন অনেক কাছের এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমাদের আর মায়ের মধ্যে। ধর্ম সেখানে গৌণ হয়ে যায়, মুখ্য হয়ে ওঠে সমাজের সমস্ত ভেদাভেদ মুছে গিয়ে জেগে থাকা আন্তরিকতা, ভালোবাসা। তাই দুর্গাপুজো কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নয়, দুর্গাপুজো সকল মানুষের। প্যান্ডেলে গিয়ে তাই ছোট শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ হঠাৎই কোনো না কোনো সময় তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়ের কোনো মূর্ত প্রতীকের দিকে। এই কি সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়ে যাকে ভাগ্যের টানে চলে যেতে হয়েছে আমাদের ছেড়ে? এই কি সেই মা যে জন্ম দিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আলোর কোলে?
দুর্গা মা তাই আসেন বারবার, প্রতি বছর, আর আসেন সমস্ত অশুভ শক্তিকে নাশ করে শুভ চিন্তা জাগ্রত করতে। দুর্গা মায়ের পায়ের তলে থাকা এক মহিষাসুরই অশুভ শক্তি নয়, আমাদের সমাজে, নিজের অন্তরে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকে এরকম অনেক অশুভ শক্তি। মা চিনিয়ে দিতে আসেন আমাদের মনের ভেতরে থাকা সেই সমস্ত চিন্তাকে যা আমাদের আদর্শের পরিপন্থী, যা অন্যের দুর্দশার কারণ। মা যেন আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার বাধাগুলোকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার ফিরে আসেন। আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য অন্তরের সেই দুর্দশা, পীড়ন, অহংকাররূপী অশুভ শক্তিগুলোকে নাশ করে এগিয়ে চলা জীবনের পথে।
তাই পুজোর সময়ে আমরা অনেক আনন্দ করবো, আর খেয়াল রাখবো আমাদের আনন্দ অন্য কারোর কষ্ট না হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অনেক ভালোমন্দ খাবো আর লক্ষ্য রাখবো আমার আশেপাশে থাকা মানুষগুলো, প্যান্ডেলে আসা মুখগুলো যেন পেট ভরে খেতে পারে, তাদের মুখে যেন হাসি ফুটে থাকে। আমরা নতুন নতুন বেশ কিছু জামাকাপড় পরবো আর সুযোগ করে দেব এমন অনেক মানুষকে যেন তাঁরাও সেই নতুনত্বের স্বাদ পান এই পুজোতে। মা দুর্গা, এই পুজো, এই উৎসব সবার। আমাদের মজা, উচ্ছলতা যেন ছড়িয়ে পড়ে মা দুর্গার সমস্ত সন্তানের মধ্যে। খারাপ করতে চাওয়া অসুরদের আটকে দিয়ে ভালোটুকু করাই আমাদের কাজ। মা হয়তো এটুকু সম্মানই চান।
তাই ছোট বন্ধুরা এবং তাদের হাত ধরে থাকা বড়রা, আমরা, সবাই যেন অনেক আনন্দ করি, ভালো থাকি, ভালো ভালো গল্প পড়ি, মজা করি, অন্যদের সাহায্য করি, ভালো থাকি, অনেক সহজ থাকি।
প্রচ্ছদশিল্পী : স্বর্ণদ্বীপ চৌধুরী
অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। আঁকা টা ভীষণ ভালো হয়েছে স্বর্ণ।।😊😊
ReplyDelete