ধারাবাহিক গল্প : বনস্থলীর নব্য পুরাণ (প্রথম পর্ব) : টিম কিশলয়




।।১।।

-“জানো মা, বাবুইটা না ভারী বোকা! বলে নাকি মানুষরা একদম ভালো নয়, খুব দুষ্টু। সবসময় ঝগড়া করে। ও তো উড়ে উড়ে জঙ্গলের বাইরে মানুষদের আস্তানায় যায়, তখন নাকি দেখেছে সব মানুষগুলো মোট্টে মিলেমিশে থাকে না। আচ্ছা তুমিই বলো এর থেকে আর হাসির কথা কিছু হয়? সেই যেবার পুশকুন গর্তে পড়ে গেল সেবার ইরু আর শীলু, মানুষদের দু’টো ছানাই তো ওকে বাঁচাল বলো? আমি যেই এই কথা বললুম ওমনি বাবুই বললে, ‘গর্তটাও তো মানুষরাই খুঁড়েছিল’। দুষ্টু মানুষরা নাকি আমাদের ধরে আমাদের এই সাদা সাদা দাঁতগুলো কেটে নেয়! হ্যাঁ মা, এমনটা কি সত্যি হয় গো? ও মা বলো না, চুপ করে রইলে কেন?”

মা-কে ডাকতে গিয়ে পেছন ফিরে মিশকুন দেখে কেউ নেই আশেপাশে, বড় বড় গাছগুলো ছাড়া। ঝুপ করে আঁধার নেমে এসেছে। অথচ এই মাত্র তো এত্ত আলো ছিল চারদিকে। পাতার ফাঁক গলে নেমে আসা সূর্যের আলোর গোল গোল চাকতিগুলোর সাথে ধরাধরি খেলছিল মিশকুন। গাবদুগুবদু পা দিয়ে যেই না রোদ্দুরের গোল্লাগুলোকে চেপে ধরছে ওমনি দুষ্টু হাওয়াতে গাছের পাতা নড়ে উঠছে আর ওর পায়ের তলা দিয়ে পিছলে রোদ্দুরের গোল্লাটা বেরিয়ে পড়ছে। আবার যেই শুঁড় বাড়িয়ে ধরতে গেছে ঝোপের ওপরে ঘাপটি মেরে থাকা হলুদ গোল্লাটাকে, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁচ্চো!’, ব্যস! ঝোপটা প্রবল বেগে নড়ে গিয়ে রোদ্দুর ভ্যানিশ।

এই খেলা খেলতে খেলতে মিশকুন লক্ষ্যই করেনি যে কখন দলছুট হয়ে পড়েছে। মা এইজন্যই সবসময় বলে শুঁড় দিয়ে মায়ের লেজটাকে শক্ত করে পাকিয়ে ধরে থাকতে। কিন্তু সে কথা মিশকুনের মাথায় থাকলে তো! একটা প্রজাপতি কিংবা ফড়িং দেখতে পেলেই হয়েছে! তার পেছন পেছন যে কোন দিকে চলে যাবে মিশকুন তার নেই ঠিক। তবে প্রতিবারই একটু পরে টের পেয়ে মা ওর লম্বা লম্বা কুলোর মত কানদুটো শুঁড়ে করে পেঁচিয়ে ধরে টেনে নিয়ে যায় দলের সবার কাছে, অথবা মিশকুন নিজেই ফিরে চলে আসে। কিন্তু এবার মায়ের কাছছাড়া হয়ে অনেকটা দূরেই চলে এসেছে। একটু গা ছমছম করে ওঠে মিশকুনের। দেখতে মিশকুন অনেক বড়সড় হলে কী হবে, আসলে তো ও কয়েকমাসের বাচ্চা। তাই মা আশেপাশে না থাকলে একটু ভয় পায় বৈকি।

সূয্যিমামা পাটে গেলেই জঙ্গলে বড্ড ঝুপ করে আঁধার ঘনিয়ে আসে। নিমেষের মধ্যে চারিদিক কালো হয়ে যায়। বটগাছ আশুথগাছ শালগাছগুলোকে মনে হয় যেন বিশাল বিশাল দৈত্য কাঁধে গদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাস যখন বয়ে যায় পাতার ফাঁক গলে শনশন আওয়াজ ওঠে, গা শিরিশিরিয়ে ওঠে কেমন। আর দূরে সব হায়না ফেউ শেয়াল ডাকলে তো আর কথাই নেই। মিশকুন সোজা গিয়ে মায়ের পেটের তলাটিতে ঠাঁই নেয়। তখন অবশ্য সব ভয় চলে যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে মিশকুন কী করবে? মা-কে কোথায় পাবে? ভয়ের চোটে মাথার বুদ্ধিগুলো সব গুবলেট হয়ে যায়। মা কতবার মিশকুনকে বলে রেখেছিল যে যদি কখনও দলছুট হয়ে যায় তাহলে চুপটি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে, বিশেষ করে রাতের বেলায়। দলের বড়রা ঠিক খুঁজে বার করে নেবে। কিন্তু যদি মিশকুনও এদিকে মাকে খুঁজতে যায় আর মা ওদিকে মিশকুনকে খুঁজতে যায় তাহলে তো কেউই কাউকে খুঁজে পাবেনা।

আর জোরে জোরে ডেকে খোঁজ করাটাও বিপদ, কারণ যদি বনের হিংস্র পশুরা টের পায় একটা বাচ্চা হাতি এক্কেবারে একা রয়েছে তাহলে আর মোটেই নিরাপদ ব্যাপার হবে না। যদিও এই বনে বাঘ সিংহ নেই তবে হায়না, নেকড়ে আছে কতকগুলো। কালো ছোপছোপ হলদে চিতাবাঘও আছে একটা। এমনিতে এরা সব হাতিদের এড়িয়ে চলে, কিন্তু সেটা তখনই যখন হাতিরা দলবেঁধে থাকে। এদিকে মিশকুন আচমকা ভয় পেয়ে এইসব ভুলে ইতিউতি মায়ের খোঁজে দৌড়তে থাকে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে ছুটোছুটি করার পর ক্লান্ত হয়ে মিশকুন একটা বড় গাছের তলায় এসে বসে। কপাল ভালো যে এখনও কোনও হিংস্র পশুর নজরে পড়েনি ও। অন্ধকারে তারাও যে যার জায়গায় ঘুমোতে চলে গেছে মনে হয়।

মিশকুনের এবার খুব কান্না পায়। কী হবে! আর যদি কোনওদিন ফিরতে না পারে মায়ের কাছে। শুঁড় দিয়ে চোখের উপচে আসা জল মোছার চেষ্টা করে। এমন সময় কানে একটা আওয়াজ আসে, ‘পিঁপ পিঁপ পিঁপিপ পিঁইইইইপ’। বড় বড় কানগুলো একবার ঝাপটে নেয় মিশকুন। ভুল শুনল না তো? ফের কান খাড়া করে থাকে। একটু পরে কানে আসে, ‘প্যাঁ পোঁ প্যাঁ পোঁ প্যাঁ পোঁ’!

আওয়াজ লক্ষ্য করে মিশকুন হাঁটা দেয়। একটু এগোতেই জঙ্গলটা পাতলা হয়ে আসে ধীরে ধীরে। তার মানে মিশকুন কি পথ ভুলে ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলের শেষপ্রান্তে মানুষদের বসতির কাছে চলে এসেছে?

এর আগে কক্ষনো মানুষদের এলাকায় আসেনি মিশকুনের মত ছোট্ট হাতিরা। তবে মানুষদের সাথে মোলাকাত হয়েছে বেশ কয়েকবার। গাছ থেকে মৌচাক ভেঙ্গে মধু সংগ্রহ করতে আসে অনেক মানুষ, তাদের দেখেছে। কেউ কাঠ কাটতে আসে, কেউ শালপাতা কুড়োতে আসে। কী করে কে জানে মানুষরা এসব? বাবুই বলছিল ইদানীং তো আবার কিছু বদমাইশ মানুষ নাকি জঙ্গলে আসে পশুদের মারতে। তাদের মেরে তাদের চামড়া হাড় এসব নাকি নিয়ে যায়। মিশকুনের তো শুনেই গা শিউরে উঠেছিল। এমনও হয়? অথচ ঐ দু’টো মানুষের ছানা ইরু আর শীলু, ওরা তো অমন নয়, ওরা কত্ত ভালো।

মা-কে জিজ্ঞেস করলে মা বলে, সব মানুষ তো সমান হয় না। কেউ ভালো কেউ বা মন্দ। হিংস্র পশুরা খিদে পেলে তবেই প্রাণীহত্যা করে, কিন্তু যে মানুষরা খারাপ হয় তারা নাকি লোভের জন্য এমন করে।

এইসব নানা কথা মনের মধ্যে বুজকুড়ি কাটতে থাকে মিশকুনের। যাবে কি যাবে না, এই ভাবতে ভাবতেই দেখে কখন জঙ্গলের ধারের বড় রাস্তাটার পাশে চলে এসেছে। রাস্তা টপকালেই ওপারে মানুষদের বসতি। অনেকটা দূরে একটা বাক্সর মত চাকা লাগানো জিনিস যেটাকে নাকি ‘বাস’ বলে, ভ্যাঁ পোঁ ভ্যাঁ পোঁ জগঝম্প শব্দ করতে করতে চলে যাচ্ছে। এই শব্দই তবে কানে এসেছিলো মিশকুনের। কিন্তু সামনের বড় রাস্তাটা দেখে বুক ঢিপঢিপ করে ওর। মা বলেছিল এইসব রাস্তা দিয়ে মানুষ ‘বাস’ চালিয়ে অনেক দূরে দূরে যায়। আর তখন পশুপাখিরা রাস্তা পেরোতে গেলে তাদের দুম করে চাপা দিয়ে দেয়। মিশকুন ভয়ে ভয়ে ডাইনে বাঁয়ে চায়। নাহ্! কোথাও কেউ নেই, কোনও ‘বাস’ও নেই আর।

কিন্তু রাস্তা টপকে মানুষদের এলাকায় যাওয়া কি ঠিক হবে? জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে গেলে মায়েরা তো আর খুঁজেই পাবে না। এদিকে ভারী কৌতূহলও হচ্ছে কিনা। যদি একবার ইরু আর শীলুর সাথে ফের দেখা হয়। মিশকুনের নাকটা সুড়সুড় করে ‘হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁচ্চো’ হয় একটা ইয়াব্বড়। মিশকুন দেখেছে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলেই ওর লম্বা নাকটা সুড়সুড় করে। আর বেশি ভাবনাচিন্তা না করে চোঁওও করে এক ছুটে রাস্তাটা টপকে যায় মিশকুন।

জঙ্গলের বাইরে এখনও অন্ধকার ঘনায়নি তেমন। সূয্যিমামা আকাশে না থাকলেও, বেশ একটা নরম আলো চারদিকে বিছিয়ে আছে। একটু দূরে সারি সারি বাড়ি। ছোটো, বড়, বেঁটে, লম্বা, রোগা, মোটা, নানা আকারের। একটা ইয়াব্বড় মাঠ। তার চারদিকে জালের মত ঘেরা। ভেতরে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে খেলা করছে। ইরু আর শীলু ওখানে নেই তো? ওদিকপানে গুটিগুটি এগোয় মিশকুন। মাঠটা থেকে একটু দূরের একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে থাকে। ইরু আর শীলুকে দেখতে পেলেই শুঁড় দুলিয়ে ডাকবে। ওরা নিশ্চয়ই মিশকুনকে চিনতে পারবে, তারপর ঠিক ওকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

হঠাৎই মিশকুনের লেজে একটা জোরসে টান পড়ে।

‘ইইইক্কিক্কিইয়াওঁ!!!’ বলে লাফিয়ে ওঠে মিশকুন। পেছন ফিরে দেখে একটা ছোট্টমতন কালোমতন কপালে সাদা বাঁকা চাঁদওয়ালা একটা ছাগলছানার মুখে ওর লেজটা।

-“অ্যাই অ্যাই! তুই কে রে! আমার লেজ চিবোচ্চিস কেন?”

ছাগলছানাটা এর আগে মনে হয় হাতি দেখেনি। ড্যাবড্যাব করে মিশকুনের দিকে চেয়ে বলে,

-“ম্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা! আমি পুঁটিলাল, বোমকাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড! তুমি কে গা? তোমার নাকটা কত লম্বা! তোমার কানদুটো কত বড়! তোমার পা’গুলো কত মোটা মোটা! তোমার গায়ে খুব শক্তি না গো? তোমার নাম কী গো? তুমি কোথায় থাকো!”

মিশকুন খানিকটা হতভম্ব হয়ে বলে,

-“আমি মিশকুন! আমি ওই রাস্তার ওপারে জঙ্গলে থাকি। এখানে আমার বন্ধু ইরা আর শীলু থাকে। আমি ওদের সাথে দেখা করতে এসেছি।”

মিশকুন যে হারিয়ে গেছে সে কথা আর এই পুঁচকে পুঁটিলালের সামনে বলল না, পাছে ওকে ভীতু ভাবে ছাগলছানাটা।

পুঁটিলাল বলে,

-“তুমি যদি ওই বদমাইশ ভুলো কুকুরটাকে একটু দাবড়ে দাও যেন আমায় দেখলে আর ঘেউ ঘেউ না করে, তাহলে আমি বোমকাইকে বলব তোমার বন্ধুদের, ওই কী যেন নাম ইলু আর শীলু, ওদের খুঁজে দিতে। বোমকাই সক্কলকে চেনে, আতিফদাদা, ঈশানদাদা, আলেক্সদাদা! সব্বাই ওর বন্ধু।”

মিশকুন মহানন্দে বলে,

-“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ভুলোকে দাবড়ে দেব। তুমি আমাকে নিয়ে চলো শিগগির ওর কাছে।”

পুঁটিলাল বিজ্ঞের মত ঘাড় নেড়ে বলে,

-“দাঁড়াও দাঁড়াও! সে তো এখন সন্ধেবেলায় বিশুপাগলের কুঁড়েতে ঢুকে নাক ডাকাচ্ছে। সকালের আগে তাকে পাবো কই!”

-“অ্যাঁ! সকাল! ততক্ষণ আমি কী করব? কোথায় থাকব?”

ডুকরে ওঠে মিশকুন।

পুঁটিলালও চিন্তায় পড়ে,

-“তাই তো! এ তো ভারী মুশকিল। দাঁড়াও আমি বোমকাইকে ডেকে আনি তবে। তুমি চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো মিশকুনদাদা, কোত্থাও যেও না। আমি আসছি এক্ষুনি!”

মিশকুনকে এই বলে, তিড়িং বিড়িং করে পুঁটিলাল ছুট লাগাল।

(কলমে : সুস্মিতা)


।।২।।

ছুট ছুট ছুট, ছুটে তো গেল পুঁটিলাল। তবে কিনা বোমকাইকে ডেকে আনাটা হল না। সন্ধে হলেই বোমকাইয়ের জীবন কমপ্ল্যান আর নামতাময়। পড়ার ঘরে তখন মা ছাড়া কারোর প্রবেশ নিষেধ। বাবা পর্যন্ত ঘরের বাইরে থেকেই চায়ের চাহিদা জানান দিয়ে পালিয়ে যান। পুঁটিলাল তো তুশ্চু একখানা ছাগল মাত্তর!

ব্যা ব্যা করে বাড়ির আশেপাশে খানিক পায়চারি করে পুঁটি। কাঁঠাল গাছের গায়ে গা মাথা খানিক ঘষে তারপর তার বুদ্ধি খোলে। হ্যাঁ, বটুকদাদাকে গিয়ে বললে হয় তো। ছাগলছানা জানালার গ্রিল গলে ঘরে ঢুকতে পারে না বটে, কিন্তু বেড়াল তো পারে। আনন্দে ‘ব্যা-অ্যা-অ্যা' ডেকে উঠে টিনের ঘরের দিকে দৌড়ে যায় পুঁটিলাল।

কিন্তু এ কি! বটুকদাদার জায়গায় ওটা কে বসে? ও তো বটুক নয়, অন্য বেড়াল। সাদা ঝুমরো লোমশ, কেমন উলোঝুলো ল্যাজ! অচেনা লোক দেখে কথা বলতে আমতা আমতা করে পুঁটিলাল। কেমন উদাস মুখে বসে থাবা চাটছে বেড়ালটা। কেমন একটা রাজাগজা টাইপ ভাব। তাকাচ্ছেই না পুঁটিলালের দিকে! প্রেস্টিজে লাগে না বুঝি পুঁটির! ছাগল বলে হ্যাটা করে লোকে, সে বুঝি বোঝে না!

জোরসে ব্যা করে পুঁটিলাল। বলে, “কে গা তুমি? বটুকদাদার বস্তার ওপর বসেছ কেন?” ঠান্ডা চোখে এদিক তাকিয়ে দেখে বেড়ালটা। তারপর বলে, “তোমার তাতে কি শুনি? বটুক তোমার দাদা বুঝি? তাই বলি, ওর মাথায় ছাগলের মত বুদ্ধি কেন!”

অপমানজনক কথা শুনে রাগে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায় পুঁটির। খেপে গিয়ে বলে, “আমার বাড়িতে ঢুকে আবার আমারই পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করা, অ্যাঁ? রোসো ঘন্টাদুই, বোমকাই বেরোক। একটা হেস্তনেস্ত না করি তো দেখে নিও তখন!”

বোমকাইয়ের নাম শুনে গা ঝেড়েঝুড়ে সোজা হয়ে বসে বেড়ালটা। বলে, “অ, তুমি বোমকাইয়ের বন্ধু হও? তাহলে তোমার সঙ্গে আমার কোনো ঝগড়া নেই। বোমকাই ভালো ছেলে। জীবজন্তুদের প্রতি খুব মায়া ওর প্রাণে। আমি ফেলিসিয়া। তোমার নাম কি?”

ফেলি-সি-য়া!! বেড়ালের আবার এরকম নাম হয় নাকি! মাথা চুলকোতে থাকে পুঁটিলালের৷ মাথাটাকে ঘরের কাঠের খুঁটিতে ঘষতে ঘষতে সে বলে, “আমি পুঁটিলাল। তুমি কি সায়েব বেড়াল?”

ফেলিসিয়া মাথা নাড়ায়। বলে, “না না। আমি কাবলি।”

কি কাবলি? আলুকাবলি? জিজ্ঞেস করতে না করতে ফেলিসিয়া বলে, “বটুক কোথায়? ওর সঙ্গে কিছু আলোচনা করার ছিল যে!”

বেড়ালরা আবার আলোচনা করে নাকি? বোমকাইয়ের বাবা-কাকারা, তাঁদের বন্ধুরা করেন সেটা দেখেছে পুঁটিলাল। বেড়ালদের ঝগড়া আর ম্যাঁওম্যাঁও ছাড়া তো কিছু করতে দেখেনি। সে বুদ্ধি খাটিয়ে বলে, “বটুকদাদা মনে হয় লালু বেড়ালের সঙ্গে ডুয়েল লড়তে গেছে। লালু কিনা সেদিন ভোলা মাছের মাথাখানা বটুকদাদার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে গেছিল!”

ফেলিসিয়া বিরক্তিভরে ফ্যাঁস করে। বলে, “দূর! এগুলো সব মানুষদের মতো। খালি ঝগড়া আর মারামারি! এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না সত্যি!”

ব্যা ব্যা করে প্রতিবাদ জানায় পুঁটিলাল। বলে, “না না, মানুষরা সবাই খারাপ হয় নাকি! বললেই হল!”

ফেলিসিয়া উঠে দাঁড়ায়, দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলে, “তবে আর বলছি কি! ওপাড়ার ঈশান, আতিফদের চেনো তো? জানো ওদের বাড়ির বড়রা সব এইসান ঝগড়া করেছে? করে এখন বাড়ির বাচ্চাগুলোর এক সঙ্গে খেলাধুলো বন্ধ করে দিয়েছে? কি করে মিটমাট করানো যায় সেই নিয়েই তো আলোচনা করতে এলুম বটুকের সঙ্গে! সে কিনা নিজেই মারামারি করতে গেছে পাড়া উজিয়ে! দূর! যাই এখন বিশুপাগলার ওখানে, সে যদি কিছু বুদ্ধি দিতে পারে।”

তিড়িংবিড়িং লাফিয়ে ওঠে পুঁটিলাল। বলে, “আমায় সঙ্গে নেবে কাবলিদিদি, স্যরি, ফেলিদিদি? আমিও একটা মুশকিলে পড়েছি গো। একটা হাতির ছানা কেমন করে জঙ্গল থেকে এখানে এসে ঢুকে পড়েছে। মা যাবে, বাড়ি যাবে বলে কাঁদছে। কোন দু’টো বন্ধুকে খুঁজছে, আমি তাদের চিনি না যে! বোমকাই ও পড়তে বসেছে। কার কাছে সাহায্য চাইব বলো তো! আমায় নিয়ে চলো বিশুপাগলের কাছে। আমি ভেতরে যাব না কিন্তু। ভুলো কুকুর শুয়ে থাকে না ওখানে? আমাকে খ্যাঁকায় খালি।”

ফেলিসিয়া ল্যাজ নাড়িয়ে ভরসা দেয় পুঁটিকে, “ভুলোকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয় পেলেই লোকে আরো বেশি বেশি করে ভয় দেখায়। আমি আছি তো। ভুলোর নাকে যে আঁচড়খানা দিয়েছিলাম না, সেই ইস্তক আমাকে ইস্কুলের দিদিমণির মত সমীহ করে চলে। চলো, যাবে তো চলো। বিশু ঠিক কিছু না কিছু উপায় করতে পারবে।”

(কলমে : দেবলীনা)

(পরের পর্ব আগামী সংখ্যায়)

অলঙ্করণ : সুস্মিতা কুণ্ডু

2 comments:

  1. এটা দারুণ তো। বেস্ট এটা। দারুণ ভাবনা। অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের। 😊

    ReplyDelete
  2. আর সুস্মিতাদির আঁকা টাও কি মিষ্টি 😊

    ReplyDelete