ছড়ার ছন্দে : ছুটি : মধুমিতা ভট্টাচার্য




ইশকুলে রোজ পড়াশুনোর বড্ড কড়াকড়ি

ক্লাশওয়র্ক আর হোমওয়র্কের কঠিন জড়াজড়ি।

অঙ্ক ভূগোল ইতিহাসে প্রাণটা নাজেহাল

বিজ্ঞান, ইংরিজি, বাংলা, হিন্দিও বেহাল।



রিসাইটেশন, স্পেলিং, জিকে তারাও কীসে কম

সোশাল স্টাডির প্রশ্নোত্তর লিখতে বেরোয় দম।

হাতের লেখা, শ্রুতিলিখন, ব্যাকরণের চাপে

মাথার ঘিলু যাচ্ছে উবে ধোঁয়ার মতন ভাপে।



কেমিস্ট্রিটার ইকোয়েশন রয়েছে বই ভরে

ভৌতজ্ঞানের ফরমুলা সব পড়লে মাথা ঘোরে।

বায়োলজির কথা শুনে কী আর হবে বলো

বাইনোমিয়াল নোমেনক্লেচার, সে-ই তো আমায় খেলো। 



পৃষ্ঠা জুড়ে খটোমটো সায়েন্টিফিক নামধাম

কেমন করে রাখব মনে জেনাস স্পিসিস ফাইলাম।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিংটা কিচ্ছু বুঝিনা যে

ভিডিওগেমস যত্তো ভাল, ওটা ততই বাজে।



ইতিহাসের সন তারিখে বেজায় ভুল হয়ে যায়

রাজাবাদশার জীবনকথা গুলিয়ে মরি হায় হায়।

উদোর ঘাড়ে চাপবে বুধো রামার পিঠে শামা

ভয়ের স্বপ্নে মাঝরাতে রোজ ঘুম ভেঙে যায় আমার।



পাহাড় নদী মরুভূমি সাগর বা বনজঙ্গল

গ্রহের ফেরে ঘুরতে থাকি বুধ শুক্র মঙ্গল।

বৃষ্টি কেন পড়ে আবার কেনই বা পড়ে না

কখন তুফান আসে, কখন পাতাটি নড়ে না।



ভূগোল পড়ে গোলকধাঁধা রাখতে হবে মনে

লিখতে হবে পৃষ্ঠা ভরে নীল কালো বলপেনে।

এত পড়ার প্রবল চাপে ভয়েই মরি রোজ

সবাই বলে "তোর ঘিলুতে বুদ্ধি কোথায়?... খোঁজ"।



আমি শুধু বসেই থাকি আসবে কখন ছুটি

পড়াশুনো বন্ধ রেখে করব ছুটোছুটি।

আম পাড়ব জাম পাড়ব উঠব গাছের ডালে

পেয়ারা, লেবু, তেঁতুল মেখে খাব দুপুর হলে।



কেউ বলেনা দিলাম ছুটি যা গিয়ে খেল মাঠে

কিম্বা যত ইচ্ছে ঘুমো দাদু দিদার খাটে।

মাছ ধর তো পুকুর থেকে মামার সঙ্গে বসে

হকি, ক্রিকেট, কাবাডি খেল কোমর বেঁধে কষে।



আঁক তো খানিক খুশির ছবি ভরিয়ে ড্রয়িং খাতা

সবুজ আকাশ, গোলাপী গাছ নীলরঙা তার পাতা।

পড়ব আমি দিলাম কথা কিন্তু আগে তার

দিও আমায় একটু ছুটি বলছি যে বারবার!


অলঙ্করণ : সুস্মিতা কুণ্ডু

No comments:

Post a Comment