বিবিধ নিবন্ধ : ভালো থাকার কথা : লীনা রায় মল্লিক



আজ আমার ছোট্ট বন্ধুদের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আচ্ছা বলো তো দেখি, তোমাদের মধ্যে কতজন খুব তাড়াতাড়ি রেগে যাও? এই ধরো, মোবাইল ফোনে কোনও গেম খেলতে গিয়ে হেরে গেলে, আর সঙ্গে সঙ্গে মেজাজ একেবারে তুঙ্গে। জিনিসপত্র সব ছুঁড়ে ফেলে দিলে রাগের চোটে। কিংবা হয়তো স্কুলে গিয়ে টিফিন বক্স খুলে দেখলে মা তোমার প্রিয় খাবারটা দেবেন বলেও দেননি। আর সঙ্গে সঙ্গে তোমার মাথা হয়ে গেল প্রচণ্ড গরম। আরও এরকম অনেক ছোট ছোট ঘটনা নিশ্চয়ই আছে, যখন হঠাৎই খুব রাগ হয় তোমাদের। আবার ধরো হঠাৎ খুব মন খারাপ। যে কারণে রাগ হয়, ঠিক সেই একই কারণে রাগের পরিবর্তে মন খারাপ হয় কি কখনও? এতো বেশি মন খারাপ যে আর কিছু ভালোই লাগে না। পড়ায় মন বসে না? খেলতে যেতেও ইচ্ছে করে না? দিনের পর দিন শুধুই মন খারাপ? অনেক সময় হয়তো বুঝতেই পারছো না যে কেন এত মন খারাপ হচ্ছে? তাহলে এবার বলি শোনো। কয়েকটা কথা মনের মধ্যে ভালো করে গেঁথে নাও ।


প্রথমত, আমাদের জীবনটা হল খুব সুন্দর। সব সময় এটা মনে রাখবে। তাই এই সুন্দর জীবনকে সুন্দর ভাবে কাটানোর দায়িত্বটাও কিন্তু আমাদেরই। আর এই সুন্দর ভাবে জীবন কাটানোর প্রথম চাবিকাঠি হল নিয়মানুবর্তিতা, যাকে ইংরাজিতে আমরা বলি 'ডিসিপ্লিন'। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সারাদিন যদি সব কিছু নিয়মমাফিক করতে পারো, তাহলে দেখবে পড়াশোনা, খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকা, ঘুম এবং আরও অনেক কিছুর জন্য খুব সহজেই সময় বের করে নিতে পারছো। ইংরাজিতে একে বলে 'টাইম ম্যানেজমেন্ট'।

দ্বিতীয়ত, সব সময় মনে রাখবে যে জীবনে হারা আর জেতা – দুটোই থাকবে। জেতার আনন্দকে যেমন উপভোগ করতে হবে, হারের কারণটা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হবে যে ঠিক কী কারণে তুমি ব্যর্থ হয়েছো। তারপর নতুন উৎসাহ নিয়ে নিজের দুর্বলতা আর ত্রুটিগুলোকে নিজের শক্তিতে পরিবর্তিত করে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। হেরে গেলে মন খারাপ করে বসে থেকেও কোনও লাভ নেই।


তৃতীয়ত, সব সময় নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করবে। আমরা কতটা ইতিবাচক ভাবে সমস্ত ঘটনাকে গ্রহণ করি আর কতটা নেতিবাচক ভাবে, সেগুলো নির্ভর করে আমাদের 'মানসিক বুদ্ধি'র উপরে। ইংরাজিতে যাকে বলে 'ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স'। যার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স যত বেশি, সে তত বেশি সহনশীল, পরোপকারী, ইতিবাচক, পরিণত, সংবেদনশীল, ধৈর্যশীল, সহযোগিতাপরায়ণ এবং সে অতি সহজে মানসিক শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তাই সব সময় চেষ্টা করবে কীভাবে নিজের এই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে বাড়ানো যায় । নিজের সাথে কথা বলো, নিজেকে জানতে শেখো অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে। ইংরাজিতে একে বলে 'ইন্ট্রোস্পেক্সন'। নিজের মানসিক পরিস্থিতিকে আগে নিজে বোঝার চেষ্টা করো। যেহেতু তোমরা ছোটো, তাই এই ব্যাপারে মা- বাবা-দাদু- দিদা- শিক্ষক- শিক্ষিকা বা বাড়ির অন্য কোনও অভিভাকক-অভিভাবিকার সাহায্য নিতে পারো। প্রয়োজন হলে ধ্যান করতে পারো বড়দের তত্ত্বাবধানে। ইংরাজিতে একে বলে 'মেডিটেশন'। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে তোমরা মনের জোর ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে পারো। তাহলেই দেখবে আস্তে আস্তে অতিরিক্ত রাগ আর মন খারাপের হাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। 



আজ এইটুকুই থাক । আবার একদিন বসবো তোমাদের সাথে আর শুনে নেব যে তোমাদের মধ্যে কতজন নিজের অতিরিক্ত রাগ আর মন খারাপকে জয় করতে শিখে গেছো।

ভালো থেকো আমার ছোট্ট বন্ধুরা।


(সমাপ্ত)

2 comments:

  1. অত্যন্ত ভালো আর দরকারি এই লেখাটি।

    ReplyDelete