পিকচার পোস্টকার্ড




ছুটি, শব্দটা শুনলেই মনে হয় এবার ভালো হওয়ার শুরু, নিয়মমতো ঘুম থেকে না উঠে একটু দেরি করলেও মনে হয় বাড়ির বড়রা বকবে না, নাহয় বিকেলে বা সকালে মাঠে আরো এক-আধঘন্টা বেশি সময় কাটানো যাবে নির্দ্বিধায়, পড়াশুনো ছাড়াও অন্য কোনো কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা বড়দের সঙ্গে সমানতালে আলোচনা করা যাবে, আসলে কোথাও যেন নিয়মের দড়ি একটু আলগা হয়ে যায়, সবার মনেই একটা প্রশ্রয় আসে, কোথাও সবাই একটু বেশি খুশি থাকে।

আর ছুটির মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব হলো পুজোর ছুটি, এক্কেবারে মেগা ইভেন্ট! দুর্গাপুজো আসছে এই ভাবনা কসবা থেকে কানসাস সিটি অব্দি কোটি কোটি মানুষের মনকে উদ্বেল করে রাখে। আর যখন পুজো একদম দোরগোড়ায়, ঘরে ফিরে মাকে দেখার জন্য প্রতিটি অপেক্ষারত মন দূর দূর থেকে যাত্রা শুরু করে, তখন সবাই চেষ্টা করে এই ক'টা দিন বছরের বাকি দিনগুলোর থেকে একদম আলাদাভাবে কাটানোর। আর তার আয়োজনও তৈরিই থাকে। তাই পুজোর ছুটি মানেই নতুন জামা, ঘোরার প্ল্যান, ভালো খাওয়াদাওয়া, দেদার মজা, আলোর রোশনাই, স্বপ্নের রোদ্দুর।

তবে সবচেয়ে আগে পুজোর আমেজ পাওয়া যায় পুজোবার্ষিকীর হাত ধরে। বর্ষাকালের মাঝেই টুক করে মনখারাপের মেঘ সরিয়ে গোধূলির রামধনুর মতো এসে যায় একরাশ গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। সারা বছর ধরে পুজোবার্ষিকীর অপেক্ষা পুজোর ছুটির মতোই, আসছে আসছে, আর এলেই গোগ্রাসে পড়ে মনের আশ মেটানো। পাতে দিলে শেষ না করা অব্দি তৃপ্তি পাওয়া যায় না। তা তোমরা কোন্ কোন্ পুজোবার্ষিকী পড়েছ এখনো অব্দি এই বছর?

ছুটি, পুজো, পুজোবার্ষিকী আসলে সবই যেন আরেকটু ভালো থাকার, আরেকটু বেশি আনন্দ করে নেওয়ার, মন থেকে খুশির আমেজ আত্মস্থ করার চেষ্টা। আমরা স্বাধীন, তবু নিয়মের গন্ডিতে সময় কাটিয়ে সবাই কোথাও একটু যেন হাঁপিয়ে উঠি, এই পুজো আমাদের সেইসব থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীনতার আশ্বাস দেয়, নিজেরা অনুভব করি এই দিনগুলো আমরা নিজের মতো করে কাটাবো। তবে পুজোর মতো না হলেও নিজের মতো করে আনন্দ, মন ভালো আমরা সারা বছরই রাখতেই পারি। আর তার সবচেয়ে ভালো আবেশ পাওয়া যায় যখন আমরা নিঃস্বার্থভাবে অন্যদের ভালো রাখার চেষ্টা করি, বৃহত্তর স্বার্থের জন্য নিজেদের ছোট ছোট অভ্যাস পাল্টানোর চেষ্টা করি।

যেমন ধরো, সকালে উঠে নিজে জল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বড় বাটিতে জল ভ'রে বাড়ির উঠোনে কোনো উঁচু জায়গায় বা ব্যালকনিতে রেখে দিলে, যাতে পাখিরা যখন তখন এসে জল খেতে পারে। কিংবা, মায়ের জন্য নিজের হাতে গ্রিটিংস কার্ড বানিয়ে, মায়ের সবচেয়ে পছন্দের ফুল এনে একদিন মা ঘুম থেকে ওঠার আগে মায়ের বিছানার পাশে রেখে দিয়ে লুকিয়ে দেখো মা জেগে উঠে দেখার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মুখে কী অপার্থিব অনুভূতির মিশ্রণ দেখা যায়! বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো নিরীহ বিড়াল কুকুরদের দিনকয়েক খাবার দিয়ে দেখো কেমন ওরা তোমার ন্যাওটা হয়ে যায় আর তোমার মন নির্মল আনন্দে ভরে ওঠে! আবার ধরো, রাস্তায় বেরিয়ে কোনো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে রাস্তা পার করতে সাহায্য করতে পারো, বা হঠাৎই তোমার কোনো বন্ধুকে কোনো গিফট দিয়ে চমকে দাও, বা একদিন পাড়ার বন্ধুদের জড়ো করে বই, জামা বিতরণ করতে বেরিও। মজার ব্যাপার কী জানো, এই কাজগুলো প্রায়ই করতে করতে টের পাবে অজান্তেই কখন তোমার মনটা আনন্দে ভরে আছে, তোমার মুখে হাসি ফুটে আছে, দেখবে পৃথিবীটা আরো একটু সুন্দর, আরো একটু বেশি ভালোবাসার হয়ে রয়েছে।

আর কী, এবার না হয় পুজোর ছুটিতে মাঝে মাঝেই নিজেকে আর এইভাবে বাকি সবাইকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেখো সারা পরিবেশ কীভাবে আরো খুশির, আরো পজিটিভ হয়ে গেছে, পুজোর ছুটি শুধু ছুটির আনন্দে নয়, সবার ভালো থাকার পরিপূর্ণতায় কাটছে।


অলঙ্করণ : স্বর্ণদ্বীপ চৌধুরী